Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Amit Shah in West Bengal

বাংলায় ৩৫ পেতে ছকে বদল অমিতের, ৫ কারণে নজরে অধীর-গড়, অঙ্ক পাল্টে দিয়েছে সাগরদিঘি!

প্রথম পর্বে এই রাজ্য থেকে হেরে যাওয়া আসন জয়ের লক্ষ্য থেকে বাদ ছিল বহরমপুর। কিন্তু সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল এবং বড়ঞার বিধায়কের মোবাইল-কাণ্ডের পরে নতুন ছক গেরুয়া শিবিরের।

BJP and Amit Shah wants to target Murshidabad Congress leader Adhir Ranjan Chowdhury

৮ মে, সোমবার দুপুরের দিকে বাংলায় আসবেন শাহ। সে দিন হবে শুধুই জনসভা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩১
Share: Save:

চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বীরভূমের সিউড়ির সভা থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ৩৫ আসনে জিততে হবে বলে রাজ্য বিজেপিকে নতুন টার্গেট ঠিক করে দিয়েছেন অমিত শাহ। আর তার পরের দিন পয়লা বৈশাখে কলকাতায় দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, তাঁর পরবর্তী গন্তব্য হবে মুর্শিদাবাদ। এর পরেই জানা গিয়েছে, আগামী ৮ মে ফের বাংলায় আসতে পারেন শাহ। থাকবেন পরের দিনও। প্রথম দিন জনসভা এবং দ্বিতীয় দিন সাংগঠনিক বৈঠক। ওই দিনটা আবার বাঙালির প্রিয় উৎসব পঁচিশে বৈশাখ। বাংলায় ভাল ফলের লক্ষ্যে তাই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনেও অংশ নিতে পারেন শাহ।

এখনও পর্যন্ত যা ঠিক, তাতে ৮ মে, সোমবার দুপুরের দিকে বাংলায় আসবেন শাহ। সে দিন হবে শুধুই জনসভা। আর পরের দিন জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে শাহের সফর এবং সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা। বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের সংগঠন ‘খোলা হাওয়া’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে। সব ঠিক থাকলে সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন অমিত।

স্থান, কাল কিছুই চূড়ান্ত না হলেও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। শাহ যে হেতু মুর্শিদাবাদে যেতে চেয়েছেন, তাই বহরমপুরে সভা করার প্রাথমিক ভাবনা রয়েছে। তবে রাজ্য বিজেপি চাইছে এমন একটা জায়গায় সভা হোক, যেটা মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া দুই জেলার কাছাকাছি হবে। যদিও স্থান নির্বাচনের কাজটা করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে বসে না থেকে বৃহস্পতিবারই বহরমপুরে কর্মী সম্মেলন করে এসেছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি বুধবার গোটা দিনটা কাটিয়েছেন মুর্শিদাবাদে। জেলার জঙ্গিপুর, আহিরন, সুতিতে ঘুরেছেন।

কিন্তু মুর্শিদাবাদই কেন শাহের লক্ষ্য? বিজেপি বছর দেড়েক আগেই রাজ্যের হেরে যাওয়া আসনগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ শুরু করে বিজেপি। তখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি আসন এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত এবং বসিরহাট ‘কঠিন আসন’ হিসাবে বিজেপির তালিকায় ছিল না। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুধু বহরমপুর এবং জঙ্গিপুরকে তালিকায় আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে বারাসতও এসেছে বিজেপির লক্ষ্যে। আর সেই বেড়ে যাওয়া আসনের দিকে তাকিয়েই বহরমপুর অভিযান শাহের।১৯৯৯ থেকে ২০১৯ টানা পাঁচ বার বহরমপুর আসন থেকে জিতেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার সেই আসনকে বিজেপি টার্গেট করছে পাঁচটি কারণে। বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে দলের সেই অঙ্কের কথা।

১। ২০১৯ সালে অধীর এই আসন থেকে জিতেছিলেন ৮০,৬৯৬ ভোটে। বিজেপি তৃতীয় স্থানে ছিল ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে। তৃণমূল ভোট বাড়িয়েছিল ১৯.৬১ শতাংশ। আর কংগ্রেসের ভোট কমেছিল ৫.০৭ শতাংশ। কিন্তু তার পাঁচ বছর আগেই অধীর বহরমপুর থেকে জিতেছিলেন ৩,৫৬,৫৬৭ ভোটে। ফলে নিজের গড়ে আগের মতো অধীরের দাপট নেই বলেই মনে করছে বিজেপি।

২। দ্বিতীয় কারণ বহরমপুর বিধানসভা আসন। ২০২১ সালের ভোটে বিজেপি ওই জেলায় খারাপ ফল করলেও জয় পেয়েছিল বহরমপুরে। সুব্রত মৈত্র জিতেছিলেন ২৬,৮৫২ ভোটের ব্যবধানে। আর কংগ্রেস নয়, দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল। সুতরাং, বিজেপির অঙ্ক লোকসভা নির্বাচনে মূল প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে টেক্কা দেওয়া কঠিন হবে না।

৩। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এই লোকসভা আসনকে এগিয়ে রাখছে বিজেপি। সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি কংগ্রেস। ফল হয় তৃণমূল ছয়, বিজেপি এক। মোট ভোটের নিরিখে তৃণমূল পায় ৫০.১ শতাংশ আর বিজেপি ৩১.৬ শতাংশ। সেখানে অধীরের কংগ্রেস ১৫.১ শতাংশ। ’১৯ সালেও এগিয়ে থাকা বহরমপুর লোকসভা আসনে অনেক পিছিয়ে থেকে তিন নম্বরে কংগ্রেস। আর বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির হার বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। এই পরিসংখ্যানও বিজেপিকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে।

৪। জীবনকৃষ্ণ নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিজেপিকে। সম্প্রতি সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। পুকুরে মোবাইল ছুড়ে ফেলার ঘটনায় গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে। অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তৃণমূলকে। এই আসনে ২০২১ সালে তৃণমূল জিতেছিল মাত্র ২,৭৪৯ ভোটে। ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয় বিজেপি। এ বার সংরক্ষিত বড়ঞা বিজেপিকে বড় ডিভিডেন্ড দেবে বলেই অঙ্ক গেরুয়া শিবিরের।

৫। সর্বশেষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চম কারণ সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল। এই ভোটের ফল রাজ্য রাজনীতির অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। হিসাবে দেখা গিয়েছে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে সাগরদিঘিতে তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার ৫০.৯৫ থেকে ৩৪.৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ওই ফল দেখে বিজেপির অঙ্ক, সংখ্যালঘু ভোট আর তৃণমূলের সঙ্গে নেই। বহরমপুর আসনের ক্ষেত্রে সেই ভোটের একটা বড় অংশ আসতে পারে বিজেপির ঝুলিতে। আর অধীরের অতীতের জয় অনেকটাই নির্ভর করেছে সংখ্যাগুরু ভোটের উপরে। এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আগামী এক বছরের মধ্যে সেই ভোট এককাট্টা করতে পারলে রাজ্যে ৩৫ আসন জয়ের লক্ষ্যে বহরমপুর হয়ে উঠতে পারে ‘সহজ’ আসন।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা হিন্দু, মুসলমান এই ভাবে ভোটের হিসাব করি না। প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ নীতিই আমাদের সম্বল। আর অধীর চৌধুরীর পুরনো ক্যারিশমা আর নেই। মানুষ এটাও বুঝছেন, কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে আখেরে কোনও লাভ নেই। যে বামেদের সঙ্গে অধীরের পুরনো লড়াই, তাদের সঙ্গেই বর্তমানে সখ্য মোটেও সুবিধা দেবে না।’’ এর পাশাপাশি এই আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেত্রী তথা রাজ্য সম্পাদক ফাল্গুনী পাত্রের বক্তব্য, ‘‘বহরমপুর লোকসভা এলাকায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাঁরাও বলছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচন ধর্মের ভিত্তিতে নয়, মোদীজির উন্নয়নযজ্ঞের ভিত্তিতেই হবে। সুতরাং, বহরমপুরে জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah adhir chowdhury BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE