Advertisement
E-Paper

এ কোল থেকে সে কোল, ‘পাশে’ দাঁড়ানোর দৌড়ে দু’পক্ষ

হামলার নৃশংসতায় দেশ যখন শোকে পাথর, দু’পক্ষের নেতারা পাশে দাঁড়ানোর ছবি তুলে ধরতে কোনও শিষ্টাচার, শালীনতার বালাই রাখলেন না!

(বাঁ দিকে) নিহত বিতান অধিকারীর ছেলের সঙ্গে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। প্রতিবাদ মিছিলে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নিহত বিতান অধিকারীর ছেলের সঙ্গে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। প্রতিবাদ মিছিলে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৩১
Share
Save

ছিল মুর্শিদাবাদ। দোসর হল পহেলগাম। অশান্তি এবং মৃত্যুকে ঘিরে টানটান প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপি!

কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলার তিন জন। তাঁদের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা দুই বাঙালি পর্যটক বিতান চক্রবর্তী ও সমীর গুহের কফিনবন্দি দেহ বুধবার সন্ধ্যায় শহরে এসে পৌঁছনোর পরে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল শাসক দলের মন্ত্রী, পুর-প্রতিনিধি এবং বিরোধী দলনেতা, বিধায়কদের। হামলার নৃশংসতায় দেশ যখন শোকে পাথর, দু’পক্ষের নেতারা পাশে দাঁড়ানোর ছবি তুলে ধরতে কোনও শিষ্টাচার, শালীনতার বালাই রাখলেন না! কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে নিহত বিতানের শিশুপুত্রকে কোলে তুলে নিয়ে ‘হিন্দু শহিদে’র পক্ষে জিগির তুললেন স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজেদের ‘মোদীর বাচ্চা’ পরিচয় দিয়ে তাঁরা যখন বিচার বুঝে নেওয়ার হুঙ্কার দিচ্ছেন, দলের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, শমীক ভট্টাচার্য বা বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ তখন যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়! পরক্ষণেই বাবাকে হারানো ছেলেকে দেখা গেল বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের কোলে।

পরে বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতে ঢোকার আগে সেই শিশুকে হেফাজতে নিয়ে নিয়েছিলেন মন্ত্রী অরূপ। তাঁরাই তখন অভিভাবক! আবার বেহালায় নিহতের বাড়িতে হাজির ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায়, স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি সুদীপ পোল্লে-সহ দলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক। পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ ও দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য। কফিনে রাখা মরদেহের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁদের। সেখানেই এক পাশ দিয়ে নিয়ে আসা হয় পরিজনেদের। ইন্দ্রনীল ও অনুপমের গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় সুদীপকে। মৃদু ঠেলাঠেলির মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়!

তার আগে নিহতদের কফিন নিয়ে বিমান নামার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মন্ত্রী ফিরহদ হাকিম, অরূপ। তবে পুর-প্রতিনিধি অসীম বসুকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। বিজেপির তরফে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ অভিজিৎ, শমীক, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা, দলের নেতা রূদ্রনীল ঘোষেরা। শুভেন্দু পৌঁছতেই এক দল লোক গেরুয়া পতাকা নিয়ে কার্গো গেটের বাইরে পৌঁছে যান। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ায় তাঁরা জাতীয় পতাকা নিয়ে ফের আসেন। মোটরবাইক নিয়েও ভিড় করেছিলেন একাধিক লোক।

নিহতকে শ্রদ্ধা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ও অন্য কংগ্রেস নেতাদের।

নিহতকে শ্রদ্ধা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ও অন্য কংগ্রেস নেতাদের। —নিজস্ব চিত্র।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ দিনই কাশ্মীর-কাণ্ড বা অন্য কোনও সংবেদনশীল বিষয়ে সতর্ক ভাবে কথা বলার নির্দেশ মন্ত্রীদের দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়েছিল কাশ্মীরের ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করে। যদিও মুখে সতর্ক থাকলেও দলের নেতাদের আচরণে তেমন ‘সংবেদনশীলতা’ দেখতে পাননি অনেকেই।

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘‘জঙ্গিদের কোনও জাত-ধর্ম হয় না। এরা জন্মগত অপরাধী। এদের ক্ষমাও করা যায় না! ভেবে পাচ্ছি না, এতক্ষণ ধরে হয়েছে, বেছে বেছে করেছে, যা জানতে পারছি। অনেক সেনা ছিল। এমনিতেই সীমান্ত এবং সংবেদনশীল এলাকা। এখন সে সব নিয়ে কথা বলব না। কড়া পদক্ষেপ করা হোক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিতান অধিকারীর স্ত্রী ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। সখের বাজারের মৃতের আত্মীয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। ধসের কারণে কাশ্মীরে আরও ২৬ জন আটকে রয়েছেন। রেসিডেন্ট কমিশনার যোগাযোগ রাখছেন। পরে কেওড়াতলা শ্মশানে গিয়ে মন্ত্রী অরূপও নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

জঙ্গি হামলার পরে ‘হিন্দু আক্রান্ত’ বলে সুর চড়িয়ে বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার ডাকে মৌলালি থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। মিছিলে পা মেলান জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ, বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায় প্রমুখ। শুভেন্দু সেখানে বলেন, “কাশ্মীরের ঘটনা নিয়ে আরামবাগে তৃণমূল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুতুল পুড়িয়েছে। তা হলে মুর্শিদাবাদের ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কী করা উচিত? কাশ্মীর এবং মুর্শিদাবাদে এক মডেল!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঝালদায় নিহত মণীশ রঞ্জনের বাড়িতে গিয়ে একই সুরে কথা বলেছেন। কলকাতায় এসে কাশ্মীরের ঘটনাকে উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয় আখ্যা দিয়েছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি জামাল সিদ্দিকী।

এরই মধ্যে নিহতদের মরদেহ আসার আগে-পরে তাঁদের বাড়িতে পরিজনদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা। স্থানীয় ভাবে দু’দিন সর্বত্র প্রতিবাদের পরে কাল, শুক্রবার কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। বিধান ভবনে মোমবাতি জ্বালিয়ে, হাজরায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘‘এই পাশবিক হামলার পাশাপাশি কাশ্মীর নিয়ে মোদী সরকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কড়া নিন্দা করছি আমরা। যেখানে ১০ ফুট দূরে দূরে নিরাপত্তা বাহিনী থাকে, সেখানে জঙ্গিরা কী ভাবে এমন নাশকতা ঘটাল? এই ঘটনা পুলওয়ামা-কাণ্ডের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP TMC Congress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}