Advertisement
E-Paper

‘কথা’ রাখলেন কেষ্ট, মনোনয়ন তুলে নিলেন একমাত্র বিরোধী প্রার্থী

বৃহস্পতিবার সকালে সি‌উড়িতে মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার আবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। মহকুমা শাসক কৌশিক সিংহ নিজেই সে কথা জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:১৬
চিত্রলেখা রায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

চিত্রলেখা রায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

সবেধন নীলমণিটিও আর রইল না। বীরভূম জেলা পরিষদে বিজেপি-র তথা বিরোধীদের একমাত্র প্রার্থী চিত্রলেখা রায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করার আবেদন জমা দিলেন। অর্থাৎ বীরভূম জেলা পরিষদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরোধীশূন্য করে ফেলার বন্দোবস্ত তৃণমূল সেরে ফেলল।

বৃহস্পতিবার সকালে সি‌উড়িতে মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার আবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। মহকুমা শাসক কৌশিক সিংহ নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। তবে, বীরভূম জেলা তৃণমূলের দাপুটে সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার রাতেই জানিয়েছিলেন যে, জেলা পরিষদের একমাত্র বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।

এ দিন সকালে বিজেপি প্রার্থী যখন মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে যান, সঙ্গে তখন তাঁর দলের কোনও লোকজন ছিল না বলেই খবর। তৃণমূলের লোকজন চিত্রলেখা রায়কে মহকুমা শাসকের দফতরে নিয়ে যান। তাঁদের সামনেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদনপত্র মহকুমা শাসকের হাতে তুলে দিতে হয় চিত্রলেখাদেবীকে।

মহকুমা শাসক কৌশিক সিংহ বলেছেন, “চিত্রলেখা মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিকেলের মধ্যে তা জানানো হবে।” তবে মহকুমা শাসক যখন এ কথা জানান, তখনও পঞ্চায়েত নির্বাচন মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ আসেনি। একটু বেলায় হাইকোর্টের নির্দেশ আসে। জানানো হয়, ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত যাবতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাহাক পর্বও থমকে গিয়েছে। চিত্রলেখা রায়ের মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জমা পড়লেও, তা এখনই গৃহীত হচ্ছে না।

অনুব্রত মণ্ডল আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “জেলা পরিষদে যে একমাত্র বিরোধী প্রার্থী রয়েছেন, তিনি খুব মানসিক কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, তিনি উন্নয়নের বিপক্ষে গিয়ে ভুল করেছেন। কষ্ট যখন পাচ্ছেন, তখন মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে।” অনুব্রতর কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, জেলা পরিষদের একমাত্র বিরোধী প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হবে। কথা রাখলেন অনুব্রত মণ্ডল। আরও এক ‘নজির’ গড়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বীরভূম জেলা পরিষদের সব আসন তৃণমূলের দখলে নেওয়ার বন্দোবস্ত সেরে রাখলেন।

আরও পড়ুন:

বন্ধু রিয়াশ্রীকে হারাতে মরিয়া বিজেপির চিত্রলেখা

এ বার কি প্রত্যাহার করানোর খেলা? সাক্ষাত্কারে কী বললেন কেষ্ট...

এ দিন দুপুর পর্যন্ত চিত্রলেখার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। তবে, বিজেপি-র বীরভূম জেলা পর্যবেক্ষক সায়স্তন বসু বললেন, ‘‘প্রত্যাহার করিয়ে আর কোনও লাভ নেই।

কারণ, হাইকোর্ট পঞ্চায়েত নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়ার উপরে আগামী ১৬ তারিখ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেছে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন, কারণ তাঁরা মানসিক কষ্ট পাচ্ছেন। এ কথা বলে উনি আমাদের উপকারই করেছেন। কারণ, তাঁর এই উস্কানিমূলক মন্তব্য হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ আদায় করতে আমাদের সাহায্য করেছে।’’

মনোনয়ন জমা পর্ব ঠিক মতো মেটার আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, বীরভূম জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে যাচ্ছে। কারণ ৪২-টির মধ্যে ৪১টি আসনেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অন্য কোনও দল প্রার্থী দিতে পারেনি। রাজনগর এলাকার একটি মাত্র আসনে বিজেপি-র তরফ থেকে চিত্রলেখা রায় মনোনয়ন জমা দেওয়ায় বীরভূম জেলা পরিষদকে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরোধীশূন্য’ বলা যাচ্ছিল না। কিন্তু সে ব্যবস্থাও তৃণমূল করে ফেলল। আজ সকাল থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আজই চিত্রলেখাকে দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জমা করিয়ে দেওয়া হল।

বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডল আনন্দবাজারকে বললেন, “চিত্রলেখা রায় গত কাল আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, দাদা আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাই। আমি জিজ্ঞাসা করি, কেন? তোমাকে কি কেউ জবরদস্তি করেছে? তিনি বলেন, না কেউ জবরদস্তি করেনি। আমার বিবেক দংশন হচ্ছে। বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে দেখেছি, রাজনগরে কোনও উন্নয়ন ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনগরে উন্নয়ন এসেছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না।” অনুব্রত মণ্ডল আরও জানালেন, চিত্রলেখা এত দিন বিজেপি-তে ছিলেন, আজ থেকে তিনি তৃণমূল হলেন।

শুধু জেলা পরিষদ নয়, বীরভূমে পঞ্চায়েতের অন্যান্য স্তরেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো শুরু হয়ে গিয়েছিল। অনুব্রত মণ্ডল বললেন, “নলহাটি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি বুধবার আমাদের হাতে চলে এসেছে। ওখানে দু’টি মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল, ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধিকাংশ আসন আমরা জিতে গিয়েছি। আজ নলহাটিতে আরও চার জন মনোনয়ন তুলে নেবেন। মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতিও আজ বিকেলের মধ্যে আমাদের হয়ে যাবে।” তবে মনোনয়ন প্রত্যাহার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাওয়ায়, আজ বিকেলের মধ্যে মহম্মদবাজারের দখল নেওয়া সুনিশ্চিত করতে পারছে না তৃণমূল।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Poll Chitralekha Roy TMC BJP Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy