তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের পরে শনিবার নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে দিল বিজেপিও। গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে পরিচিত রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে রাজবাড়ির অমৃতা রায়কে প্রার্থী করা নিয়ে বিজেপির অন্দরে বিতর্ক বেধেছিল। তবে এ বার ওই লোকসভা কেন্দ্রেরেই অন্তর্গত কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে দলের সংগঠনের দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ আশিস ঘোষকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এর মাধ্যমে রাজ্যে আগামী বিধানসভা ভোটের হিন্দু-ভোট এককাট্টা করার বিষয়েও বিজেপি বার্তা দিল বলে মত রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের। এ দিকে, সূত্রের খবর, কালীগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থীকে বামফ্রন্ট সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলেও, এখনও পর্যন্ত বিষয়টির আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা নিয়ে দুই শিবিরেই কিছু ‘জটিলতা’ রয়ে গিয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আশিস এবং তাঁর স্ত্রী দলের পুরনো কর্মী। আশিস অতীতে মণ্ডল সভাপতি, কিসান মোর্চার কালীগঞ্জ ব্লক সভাপতি, কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়কের দায়িত্বও সামলেছেন। তিনি স্থানীয় দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের চার বারের বিজেপি সদস্য। তাঁর স্ত্রী-ও ওই পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ আশিসের জীবিকা চাষাবাদ। দলের প্রার্থী সম্পর্কে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসও বলেছেন, “আশিস দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন। সবাই চেনে। যোগ্য প্রার্থী।” তৃণমূলের অবশ্য কটাক্ষ, যখনই নির্বাচন হোক বা যাঁকেই প্রার্থী করা হোক, বিজেপি হারবেই।
আশিসকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে আরও একটি সমীকরণও মনে করিয়ে দিচ্ছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। বিধানসভা ভোটের আগে বার বার হিন্দু-ভোট এক জোট করার বার্তা দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে তৃণমূল ও কংগ্রেস, দুই শিবিরই উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু প্রার্থী বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মত, এই প্রেক্ষিতে আশিসকে প্রার্থী করার মাধ্যমে প্রত্যাশিত ভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপি হিন্দু-ভোট এককাট্টা করারই চেষ্টা করল। যদিও এই বিধানসভায় সংখ্যালঘু ভোটই নির্ণায়ক। বিষয়টি মেনে নিয়েই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, “দল প্রার্থী দিচ্ছে। কিন্তু এই বিধানসভায় সংখ্যালঘুদের ভোট বেশি। দলের তেমন শক্তি নেই। তবে বিজেপি পূর্ণ শক্তি দিয়েই লড়বে। বাম-কংগ্রেস আলাদা লড়লে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।”
কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে বামফ্রন্ট সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবৃতি দিয়ে বামেরা সে কথা জানায়নি। সূত্রের খবর, বামফ্রন্টের সমর্থন চেয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এখনও কোনও চিঠি দেননি। এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্টও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও ঘোষণা করেনি। তার জেরে নদিয়া জেলা সিপিএম বা বাম নেতৃত্বের কাছেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ পৌঁছয়নি। কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ কলকাতা থেকে কালীগঞ্জে ফিরলেও এখনও তাঁর হয়ে প্রচারে নামতে দেখা যায়নি স্থানীয় বাম কর্মী-সমর্থকদের।
তবে এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, কালীগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের যে সিদ্ধান্ত ফ্রন্ট নিয়েছে, তা সময়োপযোগী এবং সামনের বৃহত্তর লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । সূত্রের খবর, প্রদীপ বামেদের ধন্যবাদ জানালেও প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের অন্দরে এই নিয়ে 'অসন্তোষ' প্রকাশ করেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)