মতুয়া এবং হিন্দু উদ্বাস্তুদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় তাঁদের সাহায্য করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কারচুপি চিহ্নিত করা-সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রভারী অমিত মালবীয়-সহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বুধবার নয়াদিল্লির নির্বাচন সদনে গিয়ে কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করলেন। পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা তৈরি হতে পারে, ছ’পাতার চিঠিতে তা বিশদে উল্লেখ করা হয়েছে। সে সব সমস্যার মোকাবিলায় একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তথা পরামর্শও জমা দেওয়া হয়েছে।
শমীক এবং মালবীয় ছাড়া প্রতিনিধি দলে ছিলেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার, মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং কমিশনের সঙ্গে দলের তরফে সমন্বয় রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ওম পাঠক। কমিশনে তাদের জমা দেওয়া চিঠি তথা দাবিপত্রে লেখা হয়েছে যে, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরকে কাজ করতে হয়। অন্য কোনও রাজ্যে এই পরিস্থিতি নেই। এই কাঠামোগত নির্ভরশীলতা স্বশাসন এবং নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করে। ভারতের নির্বাচন কমিশন বার বার বলা সত্ত্বেও রাজ্য সংশোধনমূলক পদক্ষেপ করেনি। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা দরকার যাতে এসআইআর বা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত থাকে।
এসআইআর প্রক্রিয়া যে গতিতে চলছে সিএএ-র মাধ্যমে মতুয়া তথা অন্য হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব শংসাপত্র দেওয়ার গতি তার চেয়ে কম বলে অভিযোগ উঠছে। বিজেপি যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে তা বুধবার কমিশনকে তাঁদের দেওয়া চিঠি দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কারণ বিজেপি লিখেছে, মতুয়া সমাজ বা অন্য উদ্বাস্তু হিন্দু জনগোষ্ঠীগুলিকে তাঁদের জন্য নির্ধারিত নথির বিষয়ে স্পষ্ট করে কমিশন কিছু না-জানানোয় অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। বিজেপির দাবি, এই জনগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সরাসরি কমিশনকে যোগাযোগ করতে হবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে গিয়ে কথা বলে তাঁদের সংশয় দূর করতে হবে এবং প্রশাসনিক সমর্থনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকাকে স্বচ্ছ রাখতে নথির সত্যতা যাচাই করাও অত্যন্ত জরুরি বলে কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁদের দাবি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যবস্থা বা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে না। মৃত ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার, একাধিক স্থানে নথিভুক্ত ভোটার এবং ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হোক। বিজেপির দাবি, যে হেতু রাজ্যের জন্ম-মৃত্যু তথ্য পোর্টালে জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত নথি সংরক্ষিত রয়েছে, সে হেতু ওই পোর্টাল থেকে সরাসরি তথ্য খতিয়ে দেখার অধিকার রাজ্যের কাছ থেকে কমিশন চেয়ে নিক। তার পরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই তথ্যভান্ডারের সঙ্গে ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা হোক। তা হলেই মৃতদের নাম চিহ্নিত হয়ে যাবে। তবে স্বয়ংক্রিয় সেই প্রযুক্তি কাউকে মৃত হিসাবে চিহ্নিত করলেই তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না বলে বিজেপির দাবি। এনুমারেশন প্রক্রিয়ায় ফর্ম জমা দেওয়া কেউ যদি জন্ম-মৃত্যু পোর্টালে মৃত হিসাবে চিহ্নিত হন, তা হলে বিএলও এবং ইআরও দ্রুত তাঁর ঠিকানায় পৌঁছে সরেজমিনে খতিয়ে দেখুন। তার পরে পদক্ষেপ করুন। বিজেপির তরফে এমনই দাবি পেশ করা হয়েছে। মৃত ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার বা একাধিক স্থানের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত থাকা ভোটারদের চিহ্নিত করতে ইউআইডিএআই (আধার) তথ্যভান্ডার মিলিয়ে দেখার পরামর্শও বিজেপি দিয়েছে।
এ ছাড়া এসআইআর-তথ্য দ্রুত আপলোড করতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিইও নিয়োগ করার দাবি তোলা হয়েছে। সে বিষয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের সঙ্গে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না বলে বিজেপির অভিযোগ। বিজেপির অভিযোগ, কমিশনের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা না থাকায় মাঠে-ময়দানে কাজ করা আধিকারিকরা পরীক্ষা না-করেই অনেক নথি গ্রহণ করে নিচ্ছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অজস্র ভুয়ো নথি তৈরি করা হচ্ছে বলে বিজেপির অভিযোগ। তাদের দাবি, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশনকে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে যে, কোন কোন নথি গ্রাহ্য হবে, কোন সময়সীমার আগে তৈরি করানো নথি গ্রাহ্য হবে বা কোন কোন নথির সত্যতা পরীক্ষা করে তবে গ্রাহ্য করতে হবে।
এসআইআরের পরবর্তী পর্ব অর্থাৎ শুনানি পর্ব শুরু হওয়ার আগে ইআরও বা এইআরও পদে উপযুক্ত পদমর্যাদা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আধিকারিকদের নিয়োগ করতে হবে বলেও বিজেপি দাবি জানিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে অনেক কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং এসডিও পদমর্যাদার নিম্নবর্তী আধিকারিকদের ওই পদগুলিতে নিয়োগ করা হয়েছে। বার বার এর সুরাহা চেয়েও লাভ হয়নি। এ ছাড়া যে সব জেলায় অনুপ্রবেশ সমস্যা বেশি এবং পরিযায়ীদের সংখ্যা বেশি, সে সব জেলায় বিএলওদের যাতে কাজ করতে সুবিধা হয়, তার জন্য ‘সাধারণ ভোটার’ কারা, তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে বলে চিঠিতে লেখা হয়েছে।