Advertisement
E-Paper

পাঁচ বছর আগের খামতি শুধরে ‘সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনা’য় জোর পদ্মের, ‘নিষ্ক্রিয়তা’ সংক্রান্ত সমালোচনা সয়েও বিজেপির মন বুথ স্তরেই

বিজেপি কেন কলকাতা অচল করে দিতে পারে না? যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারতেন? এ প্রশ্ন অনেকের। রাজ্য বিজেপির ‌এক সহ-সভাপতির কথায়, ‘‘সব রক্ত মুখে এনে শরীরকে রক্তশূন্য করে দিলে মুখেরও লাভ নেই, শরীরেরও ক্ষতি।’’

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১০:২৮
(বাঁ দিকে) শমীক ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) শমীক ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভরাডুবির কারণ খুঁজতে বসে অনেকে বলেছিলেন ‘সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনার অভাব’। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একের পর এক ওজনদার জনসভা ছিল। ‘নবান্ন অভিযান’, ‘লালবাজার চলো’র মতো তথাকথিত নজরকাড়া কর্মসূচি ছিল। ‘যোগদান মেলা’ করে পাইকারি হারে দলবদল করানো ছিল। কিন্তু বাংলার ভোটে বুথ স্তরের সাংগঠনিক শক্তি যে বরাবর নির্ণায়ক, সে কথা সম্ভবত বিজেপি নেতৃত্ব বোঝেননি। ২০২৬ সালে সেই ভুল আর চায় না বিজেপি। তাই বহিরঙ্গে ‘আপাত-নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে সমালোচিত হয়েও অন্দরমহলে ‘সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনা’র কাঠামো সাজানোতেই সবচেয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্য সব ছেড়ে আপাতত শুধু সংগঠনের নীচেরতলাকে মজবুত করায় জোর দিচ্ছে রাজ্য বিজেপি।

বিজেপি কেন কলকাতা অচল করে দিতে পারে না? যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারতেন? এ প্রশ্ন অনেকের। রাজ্য বিজেপির ‌এক সহ-সভাপতির জবাব, ‘‘সব রক্ত মুখে এনে শরীরকে রক্তশূন্য করে দিলে মুখেরও লাভ নেই, শরীরেরও ক্ষতি।’’ তিনি মনে করাচ্ছেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ব্যয়বহুল’ নবান্ন অভিযানের কথা। কলকাতার রাজপথে রাজ্য বিজেপির গোটা নেতৃত্বকেই হাজির করানো হয়েছিল। কিন্তু ভোটে কলকাতার কোনও আসনে বিজেপি জেতেনি। উল্টে নবান্ন অভিযান বা ব্রিগেড সমাবেশ অথবা সর্বভারতীয় নেতাদের উপর্যুপরি আনাগোনা সামলাতে গিয়ে বহু বিজেপি নেতাকর্মী নিজেদের এলাকায় সময় দেননি। রাজ্য বিজেপির এক প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘‘বিমানবন্দরে বা হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত বা বিদায় জানাতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কে কতগুলো ছবি তুলতে পারলেন, সেই নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভোটটা কী ভাবে করানো যাবে, সে হুঁশ ছিল না।’’ এ বারের ভোটে সেই পরিস্থিতি এড়াতে সচেষ্ট বিজেপি।

এ বার বিজেপি যে পদ্ধতিতে সদস্য সংগ্রহ করেছে, আগে কখনও তেমন হয়নি। ২০২১ সালের আগে টোল ফ্রি নম্বরে মিস্‌ড কল দিলেই সদ্যসপদ মিলত। এ বার ‘প্রাথমিক সদস্যপদ’ দেওয়া হয়েছে ফর্ম পূরণ করিয়ে এবং ওয়েবসাইটে তা জমা করিয়ে। ‘সক্রিয় সদস্যপদ’ দেওয়া হয়েছে তাঁদেরই, যাঁরা অন্তত ৫০ জনকে ‘প্রাথমিক সদস্য’ করাতে পেরেছেন।

পরবর্তী ধাপে হয়েছে বিভিন্ন স্তরে কমিটি গঠন। ‘বুথ সশক্তিকরণ দল’ গড়ে রাজ্য স্তরের প্রতিনিধিদের বুথ পর্যন্ত পাঠিয়ে সব স্তরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গড়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। নীচের স্তরের পদাধিকারীদের অস্তিত্ব শুধু খাতায়-কলমে নয়, বাস্তবেও থাকা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সমীক্ষা হয়েছে।

সর্বশেষ ধাপে নির্বাচন কমিশনে প্রায় ৭০ হাজার বিএলএ-২ (বুথ স্তর এজেন্ট)-এর নাম জমা দিয়ে বিজেপি চমক দিয়েছে। যদিও এত সংখ্যক বিএলএ-২ ‘সক্রিয়’ ভাবে মাঠে নামেননি। অন্তত অর্ধেক বিএলএ-২ নামমাত্র কাজ করেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সেই হিসাব উঠে আসাও বিজেপির জন্য ‘ইতিবাচক’ বলে নেতৃত্বের একাংশের দাবি। এসআইআর অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘কতজন কাজ করছেন, মাঠে নামছেন, সেটাও আমরা ভোট ঘোষণার তিন মাস আগেই বুঝে গেলাম। তাই বিকল্প মুখ খুঁজে নেওয়ার সুযোগও পাওয়া গেল।’’

বিজেপি সূত্রের খবর, এসআইআর-এর প্রথম পর্বে (ফর্ম বিলি এবং পূরণ) বিজেপির এসআইআর শাখার কাজ দেখে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল সন্তুষ্ট হননি। তাই এসআইআরের অবশিষ্ট পর্বে বিএলএ-দের সক্রিয়তা বাড়ানোয় জোর দিতে বলেছেন। এসআইআর শাখার সঙ্গে বুথ সশক্তিকরণ শাখাকে জুড়ে দিয়েছেন। ফর্ম পূরণ পর্ব যেহেতু শেষ পথে, সেহেতু পাড়ায় ঘুরে বেশি জনসংযোগের সুযোগ আর নেই। তবু বনসল চাইছেন, বিজেপি অবশিষ্ট পর্বটুকুতে বেশি করে মাঠে নামুক। বুথে বুথে বিজেপি কর্মীদের দৃশ্যমানতা বাড়ুক। তার সুফল এখন না মিললেও ভোটের প্রচার, ভোটার স্লিপ বিলি বা বুথ সামলানোর সময়ে মিলবে।

ইতিমধ্যেই দিল্লি, হিমাচল, ছত্তীসগঢ় এবং অরুণাচল রাজ্য বিজেপির সংগঠন সম্পাদক পবন রানা, সিদ্ধার্থন, পবন সাই এবং অনন্ত নারায়ণ মিশ্র-সহ সাংগঠনিক কাজে অভিজ্ঞ ১২জন নেতা-মন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছে। রাজ্য বিজেপির পাঁচটি সাংগঠনিক জ়োনের দায়িত্ব তাঁদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সংগঠনের সব স্তরে বৈঠক শুরু করেছেন। সেখানে মূলত দু’টি কাজ করছেন তাঁরা। প্রথমত, বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারীদের মধ্যে বিভিন্ন কাজ ভাগ করে দেওয়া। দ্বিতীয়, সেই কাজ কী ভাবে করতে হবে, কী কী সমস্যা আসতে পারে, কী ভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সে সব বুঝিয়ে দেওয়া। মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার এক পদাধিকারীর কথায়, ‘‘সব স্তরের পদাধিকারীদের জন্য আলাদা আলাদা কাজ। মণ্ডল স্তরে থাকলে এক রকম, শক্তিকেন্দ্রে থাকলে আর এক রকম। ফলে কোনও কাজ আশানুরূপ না হলে এক স্তর অন্য স্তরের উপরে দায় চাপিয়ে পার পাবে না।’’

২০২১ সালের ভোটের আগে এই ধরনের সাংগঠনিক প্রয়াসের ধারেকাছেও বিজেপি ছিল না। রাজ্য বিজেপির বর্তমান সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘যে কোনও নির্বাচন থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। জয় হোক বা হার, প্রত্যেক ফলাফল কিছু শেখায়। ২০২১ সালের ফলাফল থেকে আমরা যা শেখার শিখেছি।’’

সেই ‘শিক্ষা’র ভিত্তিতেই কি এই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া? শমীক সে বিষয়ে মন্তব্যে নারাজ। কিন্তু বিজেপির সাংগঠনিক গতিবিধি বলছে, বুথ স্তর পর্যন্ত ‘সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনা’র কাঠামো তৈরি রাখাই এ বার দলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

West Bengal Politics BJP Micro Management Poll Preparations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy