Advertisement
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
West Bengal News

বিজেপির অভিযানে ফের রণক্ষেত্র হল কলকাতার রাজপথ

বিজেপির লালবাজার অভিযান যেন বামেদের নবান্ন অভিযানেরই পুনরাবৃত্তি। সোমবার অভিযানের ঘোষিত সময়ের আগেই আচমকা নবান্নে ঢুকে পড়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছিলেন কয়েক জন বাম নেতা কর্মী।

পুলিশি ব্যূহে বন্দি। গ্রেফতারি এড়িয়ে এগনোর চেষ্টায় সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

পুলিশি ব্যূহে বন্দি। গ্রেফতারি এড়িয়ে এগনোর চেষ্টায় সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ১৭:৫৪
Share: Save:

বিজেপির লালবাজার অভিযান যেন বামেদের নবান্ন অভিযানেরই পুনরাবৃত্তি। সোমবার অভিযানের ঘোষিত সময়ের আগেই আচমকা নবান্নে ঢুকে পড়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছিলেন কয়েক জন বাম নেতা কর্মী। এ দিন পতাকাহীন বাস নিয়ে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে, তেমনই লালবাজারের সামনে চলে গিয়েছিলেন বিজেপির একদল কর্মী। তখনও কোনও দিক থেকেই মিছিল শুরু হয়নি। লালবাজারের সামনে হঠাত্ই সবাইকে চমকে দিয়ে স্লোগান ওঠে। টনক লড়তেই অবশ্য ঝটিকা হানাদার বিক্ষোভকারীদের ধরে ফেলে পুলিশ।

বিক্ষোভের আগুন। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে জ্বলছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসির গাড়ি। ছবি: বিশ্বনাথ বনিক।

তার পরের পর্বও অনেকটা আগের দিনের মতোই। পুলিশের দিকে পাথর ছোড়া হল। পুলিশের দিক থেকে পাল্টা ধেয়ে এল লাঠি, কাঁদানে গ্যাস। চলল জলকামানও। তবে বিজেপি অস্বীকার করলেও, তাদের মিছিল থেকে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রেবোর্ন রোডে। সে দিন বামেদের মিছিল থেকে এমন কিছু ঘটেনি। যেমন ঘটেনি আগুন লাগানো বা গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও। এ দিন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা পুলিশের একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেন বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। আরও একটি সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

আরও পড়ুন...
প্রশ্নে সাংবাদিক নিগ্রহের তদন্ত

লালবাজার অভিযান ঘিরে আজ যে সব রাস্তায় যানজটের সম্ভাবনা

বাম আর বিজেপি অশান্তি ছড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে: উষ্মা মুখ্যমন্ত্রীর

পুলিশ কিন্তু আজ, আগের দিনের অভিজ্ঞতার উপর দাঁড়িয়ে, সকাল থেকেই তৈরি ছিল অনেক পরিকল্পিত ভাবে। ফলে ব্যারিকেড রক্ষা থেকে শুরু করে বিক্ষোভ সামলানোয় অনেক কম বিভ্রান্ত হয়েছে লালবাজার। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে দেয়নি। বিজেপির আজকের কর্মসূচি শুধুমাত্র সরকার, পুলিশ বা প্রশাসনের সঙ্গে টক্কর নেওয়ারই ছিল না। রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল কে, তা প্রমাণ করতে বামেদের সঙ্গেও অকথিত টক্কর ছিল গেরুয়া বাহিনীর। সেই টক্করে অবশ্য বামেদের অনেকটা অনুকরণ করেই আজ থামতে হল তাদের। টপকে যাওয়া হল না।

বামেদের নবান্ন অভিযানের মতোই এ দিনও মারমুখী ছিল কলকাতা পুলিশ। বেপরোয়া মারে জখম হয়েছেন অন্তত ৬০ জন সমর্থক, অভিযোগ বিজেপির। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

এ দিন সবচেয়ে বেশি গোলমাল হয়েছে ব্রেবোর্ন রোডে আর বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটেই। হাওড়া স্টেশন থেকে বিজেপির সবচেয়ে বড় মিছিলটির নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। টি বোর্ডের কাছে মিছিল আটকাতেই, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। এর মধ্যে হঠাত্ বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। পুলিশের অভিযোগ, বিজেপির মিছিল থেকেই বোমা ছোড়া হয়। বিজেপি যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এখান থেকেই গ্রেফতার করে লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপে নিয়ে যাওয়া হয় দিলীপ ঘোষকে। ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন লকেট চট্টোপাধ্যায়। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এখানে জলকামানও ব্যবহার করা হয়।

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে পুলিশ দাঁড়াতেই দিল না বিজেপি সমর্থকদের, জমায়েত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতেই ফাটলো কাঁদানে গ্যাসের শেল। ছবি: বিশ্বনাথ বনিক।

কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে সামনে রেখে বিজেপির আর একটি লালবাজারমুখী মিছিল ছিল কলেজ স্কোয়্যার থেকে। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে সেই মিছিলের পথরোধ হতেই শুরু হয় পাথর বৃষ্টি। পাথরে কয়েকজন পুলিশকর্মী জখমও হন। পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু হয়। চলে কাঁদানে গ্যাস। পুলিশের মারে জখম হন বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী, সমর্থক। কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এখানে মারমুখী বিজেপি কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দেন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসির গাড়িতে।

ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলের দিক থেকে আসা মিছিলের সামনে ছিলেন রাহুল সিংহ, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়রা। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে এই মিছিলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের। রাহুল, রূপা দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়।

বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের মারে তাদের ৬০ জনেরও বেশি কর্মী, সমর্থক জখম হয়েছেন।

সন্ধ্যায় বিজেপির এক প্রতিনিধিদল রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়। এ দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে কলকাতা পুলিশের কাছে আজকের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রাজ্য সরকারকে তিন দিনের মধ্যে ঘটনার রিপোর্ট দিতে বলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE