E-Paper

চা বলয়ের টক্করে নজরে বাম ভোট

রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, বিজেপির এই ভাঙন যদি অব্যাহত থাকে, এই উপনির্বাচনে তাদের সঙ্কট বাড়বে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৭
election.

—প্রতীকী ছবি।

বাগানটাকে লোকে চেনে স্বর্গছেঁড়া নামে। সৌজন্যে, সদ্য প্রয়াত সমরেশ মজুমদার। কিন্তু গল্পের চৌহদ্দি পেরিয়ে এই গয়েরকাটা চা বাগানে এখন বসতির কলরব। বাগান কি বদলে গেল? গেরুয়া নেতাদের কাছে তা যেন অবিশ্বাস্য ঠেকছে। যেখানে তাঁদের দলীয় বিধায়কের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচন হচ্ছে, সেখানে একচ্ছত্র ভাবে জেতার স্বপ্নটা যেন নানা কারণে একটু কমজোরি। হয়তো চা বাগানে জমির পাট্টা দেওয়ার দৌলতে রাজ্যের শাসক শিবিরকে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করতে দেখেছেন এলাকাবাসী। তা বলে তৃণমূল শিবিরও কি জয় সম্পর্কে প্রত্যয়ী? বলা যাচ্ছে না। গেরুয়া এবং সবুজ— দু’শিবিরেরই চোখ কার্যত বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীর দিকে।

গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে এই এলাকায় পদ্মের প্রভাব যথেষ্ট ছিল। তবে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ধূপগুড়ি বিধানসভা থেকে বিজেপি প্রার্থী যেখানে ১৭,৭৬৬ ভোটে ‘লিড’ নিয়েছিলেন, সেখানে দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় সাড়ে চার হাজারে। সম্প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে একচেটিয়া ভোট পেয়েছে তৃণমূল। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তাই চর্চা, বিজেপির দিকে চলে যাওয়া ভোটের অংশ হয়তো কিছুটা হলেও ফিরেছে শাসক শিবিরে। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৪৯ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট, তৃণমূল প্রার্থীর ঝুলিতে এসেছিল প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট। দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়ে হয় ৪৩.৭৫%। বিজেপির ভোট কমে ৪৫.৬৫%-এ দাঁড়ায়।

রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, বিজেপির এই ভাঙন যদি অব্যাহত থাকে, এই উপনির্বাচনে তাদের সঙ্কট বাড়বে। এই ক্ষেত্রে তাই দু’টি বিষয়কে মাথায় রাখা হচ্ছে। এক, বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের ভোট যদি বাড়ে, তা হলে সেটা কার ঘর থেকে আসছে? দুই, ধূপগুড়িকে মহকুমা ঘোষণাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে। শনিবার প্রচারে এসে সেই আশ্বাসই দিয়ে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিশ্রুতি, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে মহকুমার মর্যাদা দেওয়া হয় ধূপগুড়িকে, সেই ব্যাপারে তিনি পদক্ষেপ করবেন। স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মহকুমা নিয়ে যথেষ্ট আবেগ রয়েছে ধূপগুড়ি শহরেও। শহরের ভোটেই এখনও পিছিয়ে তৃণমূল। অভিষেকের প্রতিশ্রুতি যদি শহরবাসীকে প্রভাবিত করতে পারে, তা হলে ঘাসফুল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় সামান্য হলেও সুবিধা পাবেন।

তবে স্থানীয় আবেগকে কাজে লাগাতে চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। প্রথমত, কাশ্মীরে নিহত সেনা জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায়কে প্রার্থী করেছে তারা। দ্বিতীয়ত, শান্তনু ঠাকুর থেকে শুরু করে দলের একাধিক রাজ্য নেতা ধূপগুড়িতে মাটি কামড়ে প্রচার করছেন। সেই প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য থেকে শুরু করে সিএএ চালু করা— সবই তুলে এনেছেন তাঁরা। তাপসী নিজে বলছেন, ‘‘বিজেপি দেশের সার্বিক উন্নয়ন করছে। সেটাই আমার সব চেয়ে বড় শক্তি।’’ জবাবে তৃণমূল কাজে লাগাতে চাইছে প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের শিক্ষক ভাবমূর্তি। অনেকেই বলছেন, শিক্ষা দুর্নীতিকে পিছনে ফেলার একটা মরিয়া চেষ্টাও রয়েছে এর মধ্যে। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ঘুরে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস থেকে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, সকলেই বলছেন, “আপনারা আর রাগ করে নেই তো?’’

বাম-কংগ্রেসের যৌথ প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্রের সম্পর্কে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, তিনি বেশি ভোট পেলে তা যাবে অন্য বিরোধীদের (পড়ুন বিজেপি) ঘর থেকে। ফলে লাভ ঘাসফুলের। শুনে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও ভাওয়াইয়া শিল্পী ঈশ্বরচন্দ্র হাসছেন। বলছেন, ‘‘সাগরদিঘি উপনির্বাচন এবং পঞ্চায়েত ভোটে প্রমাণ হয়েছে, আমাদের ভোট এখন আমাদের দিকে। আমরা সব পক্ষের থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখায় বিশ্বাসী।’’

তবু বামেদের ঘিরেই দুলছে বাকি দুই পক্ষের ভাগ্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dhupguri Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy