‘বিজেপি জুজু’-র অস্তিত্ব উড়িয়ে দিলেন প্রকাশ্যে। দাবি করলেন, ওই ‘জুজু’ আসলে সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা। কিন্তু, কর্মিসভায় সেই বিজেপি নিয়েই দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। রবিবার নদিয়ার কল্যাণীতে সেই কর্মিসভায় দলের কাজকর্ম নিয়েও নিজের অসন্তোষ চেপে রাখতে পারলেন না। জোর ধমকের পরে দলের দু’টি ব্লক কমিটি ভেঙেই দিলেন তিনি!
২১ নভেম্বর কল্যাণীর টাউন ক্লাব ময়দানে সভা করার কথা তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সভার প্রস্তুতি হিসাবেই এ দিন কর্মিসভা করেন মুকুল। শনিবার দুর্গাপুরেও দলের কর্মিসভায় মুকুলের আক্রমণের অন্যতম চাঁদমারি ছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল। এ দিনও তৃণমূলের এই শীর্ষনেতার আধ ঘণ্টার বক্তব্যে ঘুরেফিরেই এসেছে বিজেপি-র সমালোচনা। ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের পর থেকেই নদিয়া জেলা জুড়ে বিজেপি-র সদস্য বাড়ছে। সিপিএম, কংগ্রেস এমনকী, তৃণমূল থেকেও বিজেপি-তে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ দিনই কল্যাণীর চান্দুরিয়া ১ পঞ্চায়েত এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী বিজেপি-তে যোগ দেন। তাই এ দিনের কর্মিসভায় বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত সম্পর্কে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন মুকুল। ধমকের সুরে কর্মীদের বলেছেন, “বিজেপি ধর্মের সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আমরা কী করছি?”
রবিবার বেলা ৩টে নাগাদ নদিয়ার কল্যাণীর বিদ্যাসাগর মঞ্চে তৃণমূলের জেলা কমিটির বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভার শেষ বক্তা মুকুল জেলার মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়ক-সহ উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, “আমাদের সব রয়েছে। সরকার রয়েছে। বিধায়ক, পুরসভা, পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছি। কিন্তু, সেই ভাবে কি দলের অগ্রগতি হচ্ছে?” তিনি জানান, এই জেলায় নতুন ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য মাত্র ২৩ হাজারের মতো আবেদনপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু, এটা ৪৬ হাজার হওয়া উচিত ছিল। এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, “বুথের কর্মীরা কি ঠিকমতো কাজ করেননি? বিধায়ক বা পুরপ্রধানরা কি এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেননি? আয়নায় একবার নিজেদের মুখটা দেখা উচিত!”
কেমন এমন হচ্ছে, তার একটা ব্যাখ্যাও কর্মিসভায় দিয়েছেন মুকুল। বলেছেন, “আমাদের মধ্যে আত্মিক যোগাযোগের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসতে পারি। সেটা ঠিক মতো করা হয় না।” নদিয়ার এক জেলাস্তরের তৃণমূল নেতার কথায়, “বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে দলে। সেই খবর পৌঁছেছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও। সেটাই ঠারে-ঠোরে বুঝিয়েছেন উনি।” বস্তুত, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এ দিন দলের কল্যাণী ও চাকদহ ব্লক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয় বলে অন্দরের খবর। সদ্য অপসারিত চাকদহ ব্লক কমিটির সভাপতি দিলীপ সরকারের দাবি, “সাংগঠনিক কারণেই এই রদবদল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা ঠিক নয়।” কল্যাণীর সদ্য অপসারিত ব্লক সভাপতি দেবাশিস বিশ্বাসও দলীয় দ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন।
রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে বেরিয়ে অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুকুল। বরং সাংবাদিকদের কাছে দলের কাজকর্মের প্রশংসাই করেন তিনি। তাঁর সাফাই, “আরও ভাল কাজের জন্য চাকদহ ও কল্যাণীতে নতুন ব্লক কমিটি করা হবে।” জেলায় বিজেপি-র অগ্রগতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে মুকুলের উত্তর, “এটা কাগুজে অগ্রগতি। মানুষের কাছে ওদের গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা কোনওটাই নেই।” মুকুলের ধমক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলা নেতৃত্বও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “উনি কী বলেছেন, সেটা সংবাদমাধ্যমের জানার কথা নয়। এটা ঘরোয়া বিষয়। সাংগঠনিক সভায় বিশ্লেষণ, আত্মসমালোচনা হয়েই থাকে। তা দলকে শক্তিশালী করে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy