Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
BJP

পুরভোটে ‘মুখ’হীন বিজেপি

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে নিজের বাড়িতে বঙ্গ বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিজেপি-র মেয়র পদপ্রার্থীর নাম পুরভোটের আগে ঘোষণা করা হবে না বলে জানালেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।—ফাইল চিত্র।

বিজেপি-র মেয়র পদপ্রার্থীর নাম পুরভোটের আগে ঘোষণা করা হবে না বলে জানালেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৪
Share: Save:

কলকাতা পুরসভায় কোনও ‘মেয়র মুখ’ নেই বিজেপি-র। আসন্ন পুরভোটের আগে কলকাতায় মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে কারও নাম ঘোষণা করা দূর অস্ত, কাউকে ‘মুখ’ হিসাবেও তুলে ধরবে না তারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এ রাজ্যে সরকার, কলকাতা পুরসভা— কোথাওই ক্ষমতায় নেই। তাই কলকাতায় আমাদের মেয়র পদপ্রার্থীর নাম পুরভোটের আগে ঘোষণা করা হবে না। কাউকে মুখ করেও আমরা এই ভোটে যাব না। সুতরাং, জিতলে সেই মুখই মেয়র হবেন, এমন জল্পনার সুযোগও থাকবে না।’’ বিজেপি নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি কলকাতায় মুখ জোগাড় করতেই ব্যর্থ হচ্ছে মাত্র ন’ মাস আগে ১৮টি লোকসভা আসন জেতা দল? বিরোধীরা অবশ্য মনে করাচ্ছে, লোকসভা ভোটের ছ’ মাসের মাথায় রাজ্যের তিন বিধানসভা কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর (সদর) এবং করিমপুরের উপনির্বাচনে তিনটিতেই হেরেছিল বিজেপি।

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে নিজের বাড়িতে বঙ্গ বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ছিলেন দিলীপবাবু, রাহুল সিংহ, মুকুল রায়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তী, কিশোর বর্মন এবং এ রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেনন। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কলকাতা-সহ রাজ্যের সব পুরসভাতেই মেয়র বা চেয়ারম্যান মুখ ছাড়াই ভোটে যাওয়া হোক— এই মতের পাল্লাই ভারী ছিল। ওই বৈঠকের দু’দিন পর বৃহস্পতিবার দলের পুরভোট পরিচালন কমিটি ঘোষণা করেছে বিজেপি। ৫৭ জনের ওই কমিটির আহ্বায়ক মুকুলবাবু।

বিজেপি সূত্রের খবর, কলকাতায় দলের সংগঠন মোটেই আশানুরূপ নয়। যে কারণে, কলকাতা উত্তর, উত্তর শহরতলি, কলকাতা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ শহরতলি— এই চার সাংগঠনিক জেলায় এখনও জেলা সভাপতি বাছতে পারেনি বিজেপি। ওই চার জেলায় সদস্য সংগ্রহও কম হয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর)-এর বিরুদ্ধে কলকাতায় প্রচুর মিছিল এবং সভা হচ্ছে। তার তুলনায় কলকাতায় সিএএ-র সমর্থনে বিজেপি-র কর্মসূচি চোখে পড়ার মতো হচ্ছে না। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতি থেকেই স্পষ্ট, কলকাতায় বিজেপি সম্ভাব্য মেয়র ঘোষণা করার মতো মুখ পাচ্ছেই না।

এই খরা কাটাতে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আঁকড়ে ধরার মরিয়া চেষ্টা করেছিল বিজেপি। রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ‘‘আমরা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতার পুরভোট লড়তে এবং জিততে চাই। কিন্তু তিনি সাড়া দেবেন কি না, সেটা তাঁর বিষয়।’’ দলীয় সূত্রের খবর, সুব্রতবাবু থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত অনেকেই শোভনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর দিক থেকে কোনও ইতিবাচক জবাব এখনও আসেনি। এই পরিস্থিতিতে দলে নবাগত অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রাক্তন আইএএস, আইপিএস এবং নামী চিকিৎসকদের কলকাতার কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থী করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

দিলীপবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁদের মুখের অভাব নেই। কিন্তু ক্ষমতায় না থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বা মেয়র ঘোষণা করার রেওয়াজ তাঁদের দলে নেই। তাই তাঁরা মুখ ছাড়াই কলকাতা পুরসভায় লড়বেন। নিজের তত্ত্বের সমর্থনে অন্য রাজ্যের উদাহরণও দেন দিলীপবাবু।

কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। ক্ষমতায় না থেকেও সে ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে ভোট লড়েছিল বিজেপি। তা হলে এ ক্ষেত্রে সে রাস্তায় যাওয়া হচ্ছে না কেন? দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘মোদীজিকে দল প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেনি। প্রথমে তাঁকে দলের নির্বাচনী কমিটির প্রধান হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে বণিকসভাগুলি তাঁকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বলতে শুরু করে। তখন দলও সে কথা বলে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE