Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Women Reservation Bill

মোদীর বিশেষ অধিবেশন শেষ, দিল্লি থেকে সুকান্ত, দিলীপরা ফিরছেন ভোট যুদ্ধের তিন ‘অস্ত্র’ নিয়ে

সংসদের বিশেষ অধিবেশন শেষ। রাজ্যে ফিরবেন বিজেপি সাংসদরা। এসেই তিনটি বিষয় নিয়ে প্রচারে নামবেন। সেই তিন অস্ত্রে কেমন করে শান দিতে হবে তা-ও ঠিক করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

তিন অস্ত্রেই মোদীর স্তুতি চায় বিজেপি।

তিন অস্ত্রেই মোদীর স্তুতি চায় বিজেপি। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৬
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশন ঘোষণার পরে কী হয়, কী হয় রব পড়ে গিয়েছিল। বিজেপি সাংসদেরাও বুঝতে পারেননি, ঠিক কী হতে পারে ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বরের বিশেষ অধিবেশনে। বছর ঘুরলেই যে হেতু লোকসভা নির্বাচন, তাই অনেক জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক মহিলা সংরক্ষণ বিল ছাড়া বড় কিছু হয়নি এই বিশেষ অধিবেশনে। তবে তার মধ্যেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলীয় সাংসদদের বুঝিয়ে দিয়েছেন উৎসবের মরসুমে কোন তিন অস্ত্রে হবে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার প্রস্তুতি।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বেঁধে দেওয়া সুর নিয়েই বাংলায় ফিরবেন বিজেপি সাংসদেরা। বিজেপি সূত্রে যা খবর, তাতে পুজোর আগে বাকি এক পক্ষ কাল জুড়ে তিনটি বিষয় নিয়ে জোর প্রচার চালাবে বিজেপি। চন্দ্রাভিযানে ভারতের সাফল্য, জি২০ সভাপতিত্ব পালনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠা এবং সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানোর কৃতিত্ব।

মোদী সরকারের আমলে চন্দ্রাভিযান সফল হয়েছে বলে ইসরোর পাশাপাশি দলের কৃতিত্বের দাবি আগেই করেছে বিজেপি। একই সঙ্গে জি২০ নিয়েও সেই প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে বিশেষ অধিবেশনে এই দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা ওঠায় দু’টি বিষয়কে আরও পোক্ত ভাবে প্রচারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জোর পাবে মহিলা সংরক্ষণ বিল। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘বলেছেন অনেকেই কিন্তু করে দেখিয়েছেন মোদীজি। এই বিল পাশ হওয়ায় ফলে রাজ্য থেকে কেন্দ্রে নারীশক্তির প্রতিনিধিত্ব আরও জোরালো হবে। নারীর ক্ষমতায়নে নতুন যুগের সূচনা হবে। এটা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। ভোটের জন্য শুধু নয়, নারীর প্রতি সম্মানজ্ঞাপনই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’’ একই সুর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘সামনেই দুর্গাপুজো। বাংলা নারীশক্তির পুজো করে। আমরা বিশেষ অধিবেশনের মধ্য দিয়েই নারীশক্তির বন্দনা শুরু করে দিয়েছি।’’

রাজ্য বিজেপিকে যে নারী সংরক্ষণ বিল নিয়ে রাজ্যে প্রচারে নামতে হবে সেই নির্দেশও ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিলের নামের মধ্যেই নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’। প্রথমে লোকসভায় এবং বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় তা পাশ হয়েছে। আর তার পরে শুক্রবারই রাজ্য বিজেপি মহিলা মোর্চা কলকাতার সদর দফতরে উৎসব পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে মূলত মহিলা মোর্চার উদ্যোগেই এমন উৎসব হবে প্রতিটি জেলায়। তবে শুধু মহিলা মোর্চাই নয়, বিজেপি সব মোর্চাকেই এ নিয়ে প্রচারে নামাতে চায়।

অনেক দিন ধরেই দেশে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত মহিলা সংরক্ষণ বিল বা সংবিধানের ১২৮তম সংশোধনী বিলটি পাশ করানো কৃতিত্ব মোদীর বলেই প্রচারে নামতে চায় বিজেপি। সেই ইঙ্গিত বৃহস্পতিবারই দিয়ে রেখেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। ১৭ সেপ্টেম্বর মোদীর জন্মদিন হলেও বৃহস্পতিবার ছিল জন্মতিথি। রাজ্যসভায় বিল পাশের সময় চেয়ারম্যান ধনখড় প্রধানমন্ত্রীর সামনেই মনে করান, ‘‘হিন্দু তিথি অনুযায়ী আজই নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন।’’

লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও বিল পাশ হওয়ার পরে গোটা ট্রেজ়ারি বেঞ্চে ‘মোদী মোদী’ জয়ধ্বনি ওঠে। মোদী স্বয়ং সংসদে বলেছেন, ‘‘মহিলা সংরক্ষণ বিল আগেও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু পাশ করানো হয়নি। ভগবান হয়তো এটা করার জন্য আমায় বেছে নিয়েছেন। মা-বোনেদের আশ্বস্ত করছি। এই বিলকে আইনে পরিণত করার জন্য আমরা সংকল্পবদ্ধ।’’ তবে এখনই এই সংরক্ষণ কার্যকর হচ্ছে না। আবার সংবিধান সংশোধনী বিল হওয়ায় এটি দেশের কমপক্ষে অর্ধেক বিধানসভায় পাশ করাতে হবে। সেটা খুব কঠিন হয়তো হবে না তবে পরবর্তী আদমসুমারীর আগে সংরক্ষণ কার্যকর সম্ভব নয়।

যদিও সে সব কথা না তুলে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে প্রচারে নামতে মরিয়া বিজেপি। ২০১৯ সালে ‘তিন তালাক’ নিষিদ্ধ করার কৃতিত্ব নিয়ে যে ভাবে সর্বস্তরে প্রচারে নামতে বলা হয়েছিল তেমনটা করার নির্দেশ এ বারেও। কেমন হবে সেই প্রচার তা নিদর্শন হয়তো শনিবারই পাওয়া যাবে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে যাবেন মোদী। সেখানে তিনি মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানো নিয়ে কী বলেন সে দিকে তাকিয়ে দল। মোদীর প্রচারের সুরটাই প্রতিধ্বনিত হবে রাজ্য রাজ্যে।

তবে বাংলায় এ নিয়ে প্রচারে তৃণমূল মাঠ ছেড়ে দেবে, এমনটা নয়। কারণ, লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার পরেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের দুই মহিলা সাংসদ। মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলা সংরক্ষণ বিলের মা।’’ আর কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘লোকসভায় তৃণমূলের মহিলা সাংসদের সংখ্যা ৯। অর্থাৎ আমাদের ৪০ শতাংশ সাংসদ মহিলা। বিজেপির মহিলা সাংসদের সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ।’’ কাকলি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলের টিকিটে জিতে ৩৪ জন মহিলা প্রার্থী বিধায়ক হয়েছেন। মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্ত্রিসভায় আট জন মহিলাকে স্থান দিয়েছেন। বিজেপি ১৬টি রাজ্যে সরকার চালালেও একটিতেও মহিলা মুখ্যমন্ত্রী নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Reservation Bill Narendra Modi BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE