Advertisement
০৩ মে ২০২৪
BJP

মোরে আরও আরও আরও দাও... ভোটের আখের গোছাতে কেন্দ্রে আবদার, কোন বিজেপি সাংসদ এক নম্বরে

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলার বিজেপি সাংসদদের চাহিদার শেষ নেই কেন্দ্রের কাছে। বাজেট অধিবেশনের মধ্যেই গুচ্ছ দাবি জমা পড়ল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের টেবিলে।

সকলেই চান নিজের এলাকার উন্নয়ন হোক।

সকলেই চান নিজের এলাকার উন্নয়ন হোক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৪
Share: Save:

সংসদে অধিবেশন চলা মানেই সব মন্ত্রীরা এক জায়গায়। দাবিদাওয়া জানানোর এমন মওকা আর নেই! তার মধ্যে সেটা যদি হয় বাজেট অধিবেশন, তবে তো সোনায় সোহাগা। নতুন আর্থিক বছরের আগে প্রকল্প চাইলে পাওয়ার সুযোগ খানিক বেশি। সেটাই দেখা যাচ্ছে বাংলার বিজেপি সাংসদদের আচরণে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার— বাজেট অধিবেশন চলার সময়ে নিজের নিজের লোকসভা এলাকার জন্য নানা প্রকল্পের দাবি জানিয়ে এলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কাছে। বিজেপি সূত্রে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এখনও কারও কারও ঝুলিতে রয়ে গিয়েছে আবেদনপত্র। অধিবেশনের শেষ দিন সোমবার কিংবা তার পরেও সুযোগ বুঝলে মন্ত্রীদের টেবিলে ফেলে দেওয়া হবে।

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সবাই চান নিজের নিজের কেন্দ্রে আরও একটু কাজ হোক। গত চার বছরে যা করা গিয়েছে তা তো আছেই, শেষবেলায় আরও যা পাওয়া যায়, সেই দাবি নিয়ে মন্ত্রীদের দ্বারস্থ সুকান্ত, সুভাষেরা। তালিকায় আরও অনেকে থাকলেও প্রাথমিক হিসাব বলছে, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্তই এক নম্বরে। সম্প্রতি লোকসভায় সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করে ‘ফার্স্ট বয়’ হয়েছেন সুকান্ত। নিজের লোকসভা এলাকার জন্য দাবিতেও প্রথম ‘মাস্টারমশাই’।

বৃহস্পতিবার লোকসভায় যখন আদানিকাণ্ডে হইহট্টগোল চলছে, তখন সুকান্ত চলে যান ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের কাছে। নিজের লোকসভা এলাকায় ‘স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (সাই)-র উদ্যোগে একটি ‘ন্যাশনাল সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’ চান তিনি। সুকান্তের দাবি, বুনিয়াদপুরে রেলের জমিতে তৈরি হোক একটি ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেই দাবিতে তাঁর এলাকার বাসিন্দা অনূর্ধ্ব-১৪ ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলে সুযোগ পাওয়া পম্পা মাহাতোর কথাও উল্লেখ করেছেন। জানিয়েছেন, কী ভাবে পম্পাকে প্রশিক্ষণের জন্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সুকান্ত গিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিন বৈষ্ণবের কাছে। সেটা অবশ্য পুরনো দাবি পূরণ হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে। তাঁর লোকসভা এলাকায় বালুরঘাট-হিলি রেল প্রকল্পের ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের পাশাপাশি বালুরঘাট রেলস্টেশনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আর্জি ছিল সুকান্তেরই। সে দিন গিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে আসেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনকে। অশ্বিনের আগে সুকান্ত গিয়েছিলেন অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কাছে। দাবি ছিল, চলতি বছরেই যাতে বালুরঘাট বিমানবন্দর থেকে বিমান পরিষেবা চালু করা যায়।

হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রতি বারই সংসদে অধিবেশনের সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন। বাজেট অধিবেশনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। তবে কোনও দাবিদাওয়া নিয়ে যাননি। যদিও কিছু দিন আগেই তাঁর আর্জিতে রেলমন্ত্রী হুগলি লোকসভা এলাকার দু’টি স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্প’-এর আওতায় এনেছেন। তা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছেন লকেট। টুইটারে লকেট লেখেন, ‘‘রাজ্যের মোট ৯৪টি স্টেশনের মধ্যে আমার লোকসভা ক্ষেত্রের দু’টি স্টেশন চন্দননগর এবং ব্যান্ডেল অমৃত ভারত যোজনাভুক্ত হল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি এবং ধারাবাহিক ভিত্তিতে স্টেশনগুলির উন্নয়ন হবে।’’ আগেই নিজের লোকসভা এলাকায় মেডিক্যাল কলেজ এবং স্টেডিয়ামের দাবি জানিয়ে রেখেছেন লকেট। এ বার রেলমন্ত্রীর কাছে চেয়েছেন এক জোড়া অতিরিক্ত পান্ডুয়া-হাওড়া লোকাল। সেই সঙ্গে দু’জোড়া বর্ধমান-রানাঘাট ইএমইউ। লকেট চেয়েছেন বর্ধমান থেকে রানাঘাট যাওয়ার লোকাল যেন নৈহাটি স্টেশন এড়িয়ে হালিশহর লিঙ্ক লাইন ধরে।

বাজেট অধিবেশনের মধ্যে গত বুধবার জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় গিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির কাছে। জয়ন্তর দাবি অনেক। তিনি জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ির ৩১ ডি জাতীয় সড়কের মধ্যে অসম মোড়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মোড়, গোশালা মোড় এমনিতেই দুর্ঘটনাপ্রবণ। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চালু হওয়ায় ওই এলাকায় লোকজনের যাতায়াত বেড়েছে। সেই চাপ আরও বাড়বে জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ হলে। গড়কড়ির কাছে জয়ন্ত ওই সব এলাকায় উড়ালপুল এবং সার্ভিস রোড চেয়েছেন। সেই সঙ্গে আর্জি জানিয়েছেন দ্বিতীয় সেবক সেতু নির্মাণের জন্য।

রেলমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন বাংলার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারও। আগেই তিনি বাঁকুড়া-মসাগ্রাম লাইনের সঙ্গে বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের সংযোগের দাবি জানিয়ে এসেছিলেন। সে দাবি পূরণ হয়েছে। অশ্বিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছেন সুভাষ। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও নিজের এলাকায় রেল এবং সড়কপথের দাবি জানিয়েছেন। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা আবার আর্জি জানিয়েছেন আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে যাতে ‘কলাইকুন্ডা একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’-এর নির্মাণকাজে গতি আসে।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর মতে, এমন ভাবে নিজের নিজের এলাকার জন্য চিঠি দেওয়াটাই ‘স্বাভাবিক’। তাঁর কথায়, ‘‘আমিও রায়গঞ্জ থেকে বারসোই যাওয়ার রাস্তার দাবি জানিয়ে রেখেছি সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির কাছে।’’ তিনি আরও জানান, মার্চ মাসে সাংসদরা ‘ডিমান্ড অই গ্রান্টস’ জমা দিতে পারেন। সেই সময়েও অনেকে নিজের নিজের এলাকার জন্য দাবিদাওয়া জানাতে পারেন। রায়গঞ্জ লোকসভা এলাকায় রেলের উন্নতির জন্য তিনি নিজেও কিছু দাবিদাওয়া ঠিক করে রেখেছেন। জানিয়েছেন দেবশ্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Sukanta Majumdar Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE