Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
bjp

বঙ্গে ভোট লড়বেন বাংলার নেতারাই, ‘বহিরাগত হামলা’ নিয়ে সুনীল-জবাব

ভিন রাজ্যের নেতারা বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির হাল ধরবেন কি না, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:২৩
Share: Save:

বাংলার ভোট করবেন বাংলার নেতারাই। অন্তত তেমনই দাবি বিজেপি-র সর্বভারতীয় পরিচিত মুখ তথা বাংলায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুনীল দেওধরের। বস্তুত, তিনি জানিয়েছেন, এখন আর পশ্চিমবঙ্গে আসার কোনও কর্মসূচিও তাঁদের নেই। শনিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে সুনীল বলেন, ‘‘আমার উপর বাংলার একটি জোনের রিপোর্ট তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্ট তৈরি করে অমিত শাহজি’কে জমা দিয়ে দিয়েছি। এখন আর বাংলায় যাওয়ার কোনও কর্মসূচি নেই। পরে আবার নির্দেশ পেলে যাব।’’

বিজেপি সূত্রের খবর, বাংলার পাঁচটি জোনের দায়িত্ব আপাতত দেওয়া হয়েছে সায়ন্তন বসু (উত্তরবঙ্গ), রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় (রাঢ়বঙ্গ), বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী (নবদ্বীপ), জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো (মেদিনীপুর) এবং সঞ্জয় সিংহকে (কলকাতা)। এঁরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি।

তা হলে কি তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ হামলার মুখে পিছু হটল বিজেপি? যে কারণে ভিন রাজ্যের পাঁচ নেতাকে বাংলার পাঁচটি জোনের দায়িত্ব দিয়েও এখন তাঁদের আর ময়দানে নামানো হচ্ছে না? বাংলার ভোট পরিচালনার কাজে ‘অবাঙালি এবং বহিরাগত’ নেতাদের ব্যবহার করছে বলে প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল। সেই প্রচার বাঙালির সমাজজীবনে ‘প্রভাব’ ফেলতে শুরু করেছে বলেও তাদের দাবি। তৃণমূলও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সুনীল দেওধরের নাম করে তাঁদের ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করেছেন। তৃণমূলের আক্রমণ আরও ‘বৈধতা’ পেয়েছে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের আলটপকা মন্তব্যে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাংলার উন্নতি করেছেন বহিরাগতরাই।’’

তার পরেই শনিবার সুনীলের মন্তব্য, ‘‘বাংলার নেতারাই ভোট পরিচালনা করবেন।’’ তবে এরই পাশাপাশি সুনীল বলেছেন, ‘‘প্রয়োজন মতো অন্য রাজ্য থেকেও অনেকে আসতে পারেন। এটাই বিজেপি-র পরম্পরা।’’ অর্থাৎ, সুনীল দু’টি পথই খোলা রেখেছেন। তাঁর ইঙ্গিত— অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভিনরাজ্যের নেতারা বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির হাল ধরবেন কি না, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। শুধু শাসক শিবিরেই নয়, রাজ্য বিজেপি-র মধ্যেও এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ফলে সুনীল যেমনই দাবি করুন, রাজ্য নেতাদের অনেকের বক্তব্য, ঠিক কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সবটাই ঠিক করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি খানিকটা স্পষ্ট হতে পারে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার রাজ্য সফরের পরে। আগামী মঙ্গল ও বুধবার নড্ডার বাংলায় থাকার কথা। বিজেপি সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে দলের যে পাঁচটি ‘সাংগঠনিক জোন’ রয়েছে, সেগুলি নিয়ে যে রিপোর্ট ভিনরাজ্যের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দিয়েছেন, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় রদবদলও করতে পারেন নড্ডা।

বিজেপি-র ত্রিপুরা জয়ের ‘কাণ্ডারী’ হিসেবে পরিচিত সুনীল বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশ বিজেপি-র দায়িত্বে। অতীতে বাংলার নির্বাচনেও কাজ করেছেন সুনীল। তাঁকে রাজ্য বিজেপি-র সাংগঠনিক জোন মেদিনীপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলায় একাধিক বৈঠক করেছেন তিনি। সুনীল ছাড়াও বিজেপি-র আরও তিন নেতা দুষ্যন্ত গৌতম, বিনোদ তাওড়ে, বিনোদ সোনকর যথাক্রমে কলকাতা, নবদ্বীপ ও রাঢ়বঙ্গ জোনের দায়িত্ব পান। উত্তরবঙ্গ জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হরিশ দ্বিবেদীকে। তবে পারিবারিক কিছু বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি এখনও বাংলায় আসেননি। ফলে হরিশের বদলে উত্তরবঙ্গ জোনের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন সদ্য রাজ্যে সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত বিজেপি-র কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।

সুনীলদের পর আরও পাঁচ ভিনরাজ্যের নেতাকে রাজ্যের পাঁচটি জ়োনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কলকাতা, মেদিনীপুর, রাঢ়বঙ্গ, নবদ্বীপ এবং উত্তরবঙ্গ জোনের সংগঠন দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে সুনীল বনশল (উত্তরপ্রদেশ), পবন রানা (হিমাচলপ্রদেশ), রবিন্দর রাজু (হরিয়ানা), ভিখুভাই দলসনিয়া (গুজরাত) এবং রত্নাকরকে (বিহার)। এঁরা বাংলায় জেলায় জেলায় ঘুরে সংগঠনের কাজ দেখতে শুরু করেছেন। তৃণমূলের ‘বহিরাগত হামলা’ তো বটেই, এ ভাবে একের পর এক ভিনরাজ্যের নেতা বাংলার দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকে রাজ্যের পদ্মশিবিরের অন্দরে অনেকে ‘দিল্লির নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে শঙ্কিত। এরই মধ্যে সুনীলের দাবি, ভিনরাজ্যের নেতারা আসবেন-যাবেন। কিন্তু ভোট পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে রাজ্যের নেতাদের হাতেই। রাজ্য সভাপতি দিলীপও বলছেন, ‘‘যে কোনও রাজ্যেই ভোটের সময়ে অন্য রাজ্য থেকে অভিজ্ঞ নেতারা সাহায্য করতে যান। এটাই বিজেপি-র পরম্পরা। বাংলায় এ বারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাহায্যের জন্য সর্বভারতীয় নেতৃত্বের যোগদান তো থাকবেই।’’

আরও পড়ুন: আর আলোচনা চাই না, কেন্দ্রের কোর্টে বল ঠেলে ঘোষণা কৃষকদের

‘স্তাবকতা করলেই নম্বর বাড়ে, তাই আমার নম্বর কম’, মন্ত্রী রাজীব উবাচ

কিন্তু এই ‘সাহায্য’ আর ‘যোগদান’ ঠিক কতটা, তা নিয়ে জল্পনা মিটছে না রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, এ বার ২৯৪ কেন্দ্রের প্রার্থীই নিজে হাতে বাছবেন অমিত শাহ। এ বার শোনা যাচ্ছে, সব জেলা তো বটেই, বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরেও ভিনরাজ্যের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর, তেমন হলে ২০২১ সালের গোড়া থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। তখন অবশ্য তৃণমূলের ‘বহিরাগত হামলা’-র সুর আরও চড়া হবে। তখন দেখার, সেই হামলা মোকাবিলায় বিজেপি আবার বাংলার নেতাদেরই সামনে এগিয়ে দেয় কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE