Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রূপাকে নিয়ে উভয়সঙ্কটে বিজেপি

অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। এক দিকে, স্বাধীনচেতা রূপার ‘নিজের মতো’ চলার প্রবণতা বিজেপি-আরএসএসের মতো আঁটোসাঁটো সংগঠনে ভাল ভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। আবার দলেরই তরফে গোপন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপি-র কর্মী-সমর্থক এবং জনতার কাছে দলের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মুখ রূপাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০৪:০৮
Share: Save:

অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। এক দিকে, স্বাধীনচেতা রূপার ‘নিজের মতো’ চলার প্রবণতা বিজেপি-আরএসএসের মতো আঁটোসাঁটো সংগঠনে ভাল ভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। আবার দলেরই তরফে গোপন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপি-র কর্মী-সমর্থক এবং জনতার কাছে দলের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মুখ রূপাই। তাই তাঁকে এক কথায় ঝেড়ে ফেলাও সম্ভব হচ্ছে না বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে। এমত পরিস্থিতিতে রূপা হয়ে উঠেছেন বিজেপি-র গলার কাঁটা।

বিজেপি-র দৈনন্দিন কার্যকলাপে রূপা যথেষ্ট সক্রিয়। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের প্রচারে দলের অন্য নেতারা নামার আগে রূপা নেমে পড়েছিলেন। হাজরা এলাকার গোপালনগরে বিজেপি-র ভোট প্রচারের মঞ্চে তৃণমূল কর্মীদের হাতে হেনস্থা হতে হয় তাঁকে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের হাতে কারও আক্রান্ত হওয়া বা নারী নিগ্রহের ঘটনার খবর পেলেই রূপা সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন। বন্যা-দুর্গতদের ত্রাণের কাজেও তিনি দ্রুত নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের ক্ষোভ, তাঁদের ‘অনুমোদন’ ছাড়াই অতি সক্রিয়া দেখাচ্ছেন রূপা।

শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলেই বিজেপির রাজ্যস্তরের দু’টি বৈঠকে রূপার কাজের সমালোচনা করেছেন নেতৃত্ব। হাবরা-অশোকনগরে বন্যাত্রাণ দিতে গিয়ে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ রূপার পাশে না দাঁড়ানোয় দলের একাংশের এই মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে যথেষ্ট অপমানিত বোধ করেছেন রূপা। রাজ্য বিজেপির নতুন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে ঘটনাটি জানিয়েওছেন তিনি। এই দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে কৈলাস রূপাকে যেমন কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন, তেমনই জানিয়েছেন, রাহুলবাবু ও দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া দায়িত্বই অভিনেত্রী পালন করবেন।

কিন্তু রূপার বিরুদ্ধে রাহুলবাবুর প্রকাশ্য মন্তব্যে দলেরই একাংশ ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে করানো সমীক্ষার ইঙ্গিত অনুযায়ী, রূপা জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে। এমতাবস্থায় তাঁকে চটিয়ে সাধারণ মানুষকে বিজেপি-র প্রতি বিরূপ করে দিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। রাহুলবাবুর বিরুদ্ধে বহু দিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়লেও এত দিন বঙ্গ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বদলের কথা ভাবেননি তাঁরা। কিন্তু রাহুলবাবুর রাজ্য সভাপতির দায়িত্বের বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। তার আগে এ বার কেন্দ্রীয় বিজেপি নড়েচড়ে বসেছে। শিবপ্রকাশ, নির্মলা সীতারামন এবং কৈলাসকে রাজ্যে পাঠিয়ে দলের সাধারণ কর্মী, এমনকী বিক্ষুব্ধদেরও মতামত সংগ্রহ করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু রাহুলবাবুর পরিবর্তে রাজ্য সভাপতি করার মতো উপযুক্ত মুখ খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। রূপা যতই জনপ্রিয় হোন, আরএসএসের পছন্দের তালিকায় তিনি নেই। আর আরএসএসের অপছন্দের কারও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি হওয়া সম্ভব নয়। আরএসএস রাহুলবাবুর জায়গায় চাইছে অধুনা সহ সভাপতি চিকিৎসক সুভাষ সরকারকে। যিনি লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সঙ্ঘের কাছে সুভাষ সরকার ছাড়া আর কোনও নাম নেই। কিন্তু সুভাষ সরকারের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মন খুলে রাজি হতে পারছেন না। আবার বিকল্প না থাকায় তাঁর নাম উড়িয়েও দিতে পারছেন না। এই দোলাচলেই রাজ্য সভাপতি বদল আটকে আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE