ভোটের আগে মহিলাদের হাতে নগদ তুলে দিয়ে বাজিমাত করেছেন নীতীশ কুমার। বিহারে ভোটের ওই ফল উজ্জীবিত করেছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। দলের বক্তব্য, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের মহিলাদের ক্ষমতায়ন তৃণমূলকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও জিতিয়ে আনতে চলেছে। অন্য দিকে, বিজেপির বক্তব্য, মানুষ যদি সরকার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, তখন লক্ষ্মীর ভান্ডার দেখিয়ে সরকার টিকিয়ে রাখা যায় না। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দিল্লিতে পরাজয় সেটাই প্রমাণ করেছে।
ভোটবাক্সে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সাফল্য দেখার পরে একাধিক রাজ্যে এই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে ফল পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল। বিহারেও একই চিত্র। তাই তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, আসন্ন বিধানসভা ভোটেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুফল মিলবে। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, হাতে নগদ তুলে দেওয়ার মানেই মহিলাদের ভোট নিশ্চিত— এমন ভাবা ঠিক নয়। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতার কথায়, ‘‘তা হলে দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে হারতে হত না!’’ দলের যুক্তি, মানুষ অনেক বেশি ভরসা করে যোগ্য নেতৃত্বে। ওই বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা, মহিলাদের সম্মানহানি, অনুপ্রবেশ, বেকারত্ব, সিন্ডিকেট রাজের ফলে আমজনতা তৃণমূল নেতৃত্বের উপরে ভরসা হারিয়েছে। মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। তাই হাতে নগদ দেওয়ার নীতি ব্যর্থ হতে চলেছে।’’ পাল্টা তৃণমূলের কটাক্ষ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যোগ্য নেতৃত্বই নেই। আর পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদীকে রেখে ভোট চেয়ে লাভ নেই। কারণ বাংলার মানুষ বোকা নন।
ঘরোয়া ভাবে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, কেজরীওয়ালের নগদ অর্থ দেওয়ার মোকাবিলায় বিজেপি বুঝিয়েছিল, সরকার পরিবর্তন হলেও মহিলাদের হাতে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার নীতি চালু রাখা হবে। পশ্চিমবঙ্গেও একই নীতি নেওয়া হবে, দাবি বিজেপি সূত্রের। মমতার লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের বিকল্প প্রকল্প বিজেপিও ঘোষণা করতে চলেছে। মমতা দেড় হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছেন। বিজেপি প্রয়োজনে দু’হাজার বা তার বেশি টাকা দেবে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘মমতা যদি অনুদান বাড়ান, বিজেপিও সেই অনুপাতে অনুদান বাড়াতে থাকবে। মমতার চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হবে— সে বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছে দল।’’ দিল্লিতে ভোটের আগেও আপ ও বিজেপির মধ্যে এমনই প্রতিযোগিতা চলেছিল।
তৃণমূলের একাংশ মনে করাচ্ছেন, নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও, দিল্লি কিংবা মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার ওই অনুদান দেওয়ার প্রশ্নে শর্ত জারি করেছে। তাতে অনেক মহিলার নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যেখানে রাজ্যে যে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেওয়া হয় নিঃশর্ত ভাবে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে এমনটাই হবে। তারা এমন সব শর্ত চাপাবে, যে বড় সংখ্যক মহিলার নাম বাদ যাবে। বিজেপি শিবিরের যুক্তি, দিল্লি বা মহারাষ্ট্রে আলাদা করে শর্ত চাপানো হয়নি। যে সব পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাদের নাম বাদ গিয়েছে। তাতে গরিব-পিছিয়ে পড়া মহিলাকে ওই অনুদানের আওতায় আনা সম্ভব হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)