ভোটার তালিকা থেকে হিন্দুদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ হোক কিংবা আদালতের রায়ের পরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রতিবাদ, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি রাস্তায় নামছে। কিন্তু চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে জমায়েত। কয়েকটি জেলা বিক্ষিপ্ত ভাবে বাদ রাখলে জেলা ও মণ্ডল স্তরে কর্মসূচিরও অবস্থা একই। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তৈরি করেও কেন সর্বশক্তিতে রাস্তায় নামা যাচ্ছে না, এই প্রশ্নে রাজ্য বিজেপির একাংশের যুক্তি, সাংগঠনিক রদবদলে দীর্ঘসূত্রিতার প্রভাব পড়ছে রাস্তার আন্দোলনে।
দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে সম্প্রতি রাজ্যের আবগারি নীতি নিয়ে আবগারি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। মূলত মহিলা মোর্চাকে সামনে রেখে ওই কর্মসূচিতে দলের একাধিক শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকলেও আহামরি ভিড় হয়নি। আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে গত বুধবার ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল করে রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চা। আদালতের নির্দেশে সেই মিছিলে ১০০০ জনের বেশি উপস্থিত থাকার অনুমতি ছিল না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় জমায়েত তার অর্ধেকও হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে চাকরি বাতিলের রায় সামনে আসার পরেই কলকাতায় যুব মোর্চার তরফে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। সেই কর্মসূচিতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো কম। সম্প্রতি বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে মোথাবাড়ির ঘটনার প্রতিবাদে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। সেখানেও নাম মাত্র জমায়েত হয়েছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে জেলা ও মণ্ডল স্তরেও কর্মসূচি হয়েছিল। সেই কর্মসূচি গুলিতেও জমায়েত ছিল খুবই কম।
ধারাবাহিক ভাবে কর্মসূচিতে জমায়েত কম হওয়ার কারণ কী? রাজ্য বিজেপির একাংশের যুক্তি, সাংগঠনিক নির্বাচন পর্বের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই অবস্থা। ওই অংশের দাবি, এখনও সব জেলায় সভাপতি নির্বাচন হয়নি। যে সব জেলায় সভাপতি নির্বাচন হয়েছে, সেখানে অধিকাংশ নতুন মুখ। জেলা কমিটি ও মোর্চাগুলির সঙ্গে জেলা সভাপতির বোঝাপড়া তৈরি হয়নি। ফলে, জেলা থেকে যেমন কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে কর্মীদের আনা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনই স্থানীয় কর্মসূচিতেও সবাইকে খবর দেওয়া, মাঠে নামানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে একাংশের ধারণা, রামনবমীকে কেন্দ্র করে যে ভাবে সর্বাত্মক প্রচার হচ্ছে, তাতে সর্বত্র ব্যাপক ভাবে রাস্তায় নামা হবে। তার পরে এই সমস্যাটা কিছুটা মিটবে।
যদিও রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের পাল্টা দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপরে মানুষের আস্থা নেই। সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় এখনও সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি চলছে। তারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, বিরোধীদের মিছিলে গেলে সরকারি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে মানুষের ভয় ভাঙছে। ২০২৬ যত এগিয়ে আসবে, তত বিজেপির মিছিলে সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়বে।’’
তবে এর মধ্যেই আরও এক গুচ্ছ কর্মসূচি নিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। আগামী ৬ এপ্রিল দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রত্যেক দলীয় কার্যালয়ে পতাকা তুলতে বলা হয়েছে। আগামী ৮ ও ৯ এপ্রিল প্রতিটি বিধানসভায় সক্রিয় সদস্য সম্মেলন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, আগামী ৭ থেকে ১২ এপ্রিল ‘বস্তি চলো’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)