রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার আগে অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে চলেছে বিজেপি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়ো শংসাপত্র দিয়ে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’দের নাগরিক হিসেবে সুযোগ পাইয়ের দেওয়ার অভিযোগে এ বার সরব হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বাংলাদেশি নাগরিকদের বিএসএফ ধরে নিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দিয়ে আসবে বলে হুঙ্কার দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি নেতারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে চাইছে বলে তৃণমূল কংগ্রেস ও বামেদের পাল্টা দাবিও অব্যাহত।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘দার্জিলিং জেলার খরিবাড়ি, যা সীমান্তবর্তী এলাকা এবং উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে জন্ম ও মৃত্যুর জাল শংসাপত্র জারি হওয়ার খবর উদ্বেগজনক। ভুয়ো শংসাপত্রের মাধ্যমে বিদেশিরা ভারতীয় নাগরিকত্বের কাগজ পাচ্ছে—এটা শুধু আইন ভঙ্গ নয়, ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্যও সরাসরি আশঙ্কার’। তাঁর সংযোজন, ‘রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনার কারণে সীমান্তে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে সম্পূর্ণ অনুসন্ধান চালানোর দাবি জানাচ্ছি’।
যদিও এর পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আদৌ কোথাও কিছু ঘটে থাকলে কেন ঘটেছে, রাজ্য প্রশাসন দেখবে। কিন্তু সীমান্ত পাহারা দেওয়ার কাজ বিএসএফের। এখন তো সীমান্তের ৫০ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত তাদের আওতায় পড়ে। কোনও অভিযোগ তোলার আগে বিজেপি যেন মনে রাখে, সীমান্তের বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেখে!’’
সীমান্তবর্তী এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রেও বাংলাদেশিদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, এমন অভিযোগ সোমবার করেছিলেন বিজেপির বিধায়ক ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তারই সূত্র ধরে এ দিন তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘অমিত শাহজি আশ্বস্ত করেছেন, এক জনও বাংলাদেশি মুসলমান ভোটার তালিকায় থাকবেন না। প্রথমে চিহ্নিতকরণ, তার পরে বাতিলকরণ এবং পরে বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দিয়ে আসবে!’’
এই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ‘‘এসআইআর করা নির্বাচন কমিশনের কাজ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে যখন বলেন এসআইআর কখন হবে, কোথায় হবে, যখন রাজ্যে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরা বলেন এসআইআর না-হলে নির্বাচন করতে দেব না, তখন বোঝা যায় কমিশন স্বস্তিদায়ক জায়গায় নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এঁরা (বিজেপি নেতারা) এ সব করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চাইছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘নন্দীগ্রামে বাংলাদেশি ভোটার কী করে এল, শুভেন্দুর পক্ষেই ভাল জানা সম্ভব। আগে তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন, পরে বিজেপির। ওই কেন্দ্রে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি যে জিতেছে, সেটা তো ওই ভোটারদের ভোট নিয়েই! সেই ভোট কি তা হলে বৈধ?’’ সুজন মনে করিয়ে দিয়েছেন, মৃত বা অস্তিত্বহীন ব্যক্তিদের নাম অবশ্যই তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কিন্তু বিজেপির চাপে কমিশন প্রকৃত ভোটার বাদ দিতে চাইলে কড়া বিরোধিতা হবে।
এমতাবস্থায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী এ দিন দাবি করেছেন, তৃণমূলের সরকার এসআইআর নিয়ে প্রথমে হইচই করলেও পরে কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতাই করবে। অধীরের মতে, ‘‘ভোটার তালিকার কাজে হাজার হাজার কর্মচারী লাগবে, তাঁরা রাজ্যেরই। এরাঁই তো পঞ্চায়েত-পুরসভায় তৃণমূলের ভোট চুরিতে হাত পাকিয়ে রেখেছেন! এই সমস্ত আধিকারিক তৃণমূলের নির্দেশে মৃতকে জীবিত বা জীবিতকে মৃত করার জন্য বসেই আছেন!’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘দিদির কোনও ভয় নেই। এখন একটু নাচন-কোঁদন না-করলে লোকের কাছো ভুল বার্তা যাবে। পরে সব মিলে যাবে!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)