যেন ‘হাল্লা চলেছে যুদ্ধে’!
উৎসবের মরসুম শেষ হলেই নির্বাচনী আবহে ঢুকে পড়বে পশ্চিমবঙ্গ। আর কমিটি-শীতলতা সঙ্গে নিয়েই ভোট-যুদ্ধে ইতিমধ্যে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। সূত্রের খবর, দুর্গোৎসবের পরেই সারা দেশ থেকে বিশাল পদ্ম বাহিনীর ঠিকানা হবে বাংলা। সেই বাহিনীই কার্যত রাজ্য নেতৃত্বকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ করে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে!
গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় দু’শোর বেশি আসন নিয়ে সরকার বদলের স্বপ্ন ফেরি করেও বিজেপিকে থেমে যেতে হয়েছিল মাত্র ৭৭-এ। এ বার নির্বাচনের অনেক দিন আগেই তারা পূর্ণ শক্তি নামিয়ে দিতে চাইছে বঙ্গ দখলের জন্য। সূত্রের খবর, দেশের নানা জায়গার সাংসদ-সহ প্রায় ১২০০ নেতার আগামী কয়েক মাসের ঠিকানা হতে চলেছে বঙ্গ। রাজ্যের চারটি জায়গায় ছড়িয়ে গিয়ে গোটা রাজ্যের নির্বাচনী আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব পড়বে তাঁদের উপরে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, বাংলায় নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। তাঁর সহকারীর ভূমিকায় থাকবেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। ওই ১২০০ জনের বাহিনীর নেতৃত্বে থাকবেন এঁরা দু’জন। সকলের মাথার উপরে থাকবেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রের খবর, বিধাননগর-নিউটাউন এলাকায় তাঁর থাকার উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে সেখানেই ঘাঁটি গাড়তে পারেন শাহ। প্রতি মাসে অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন রাজ্যে থাকার পরিকল্পনা আছে শাহের!
কিন্তু এই বিশাল বাহিনীর কাজ কী? মূলত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর, পেশাদার সমীক্ষক সংস্থার বিভিন্ন সময়ে দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘মাটি পরীক্ষা’র কাজ সারবে এই বাহিনী। কোথায় কী প্রচার হবে, কে প্রচার করবেন, প্রচারসূচি কেমন হবে—সবটাই ঠিক করবে এই বাহিনী। সূত্রের খবর, এক জন সাংসদের দায়িত্বে থাকবে দু’টি করে বিধানসভা। তাঁর অধীনে থাকবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আরও তিন থেকে চার জন নেতা এবং বিধানসভা ভিত্তিক ১০-১২ জনের একটি দল। প্রতিটি বিধানসভার জন্য একটি ‘অটোমেটেড ইউনিক’ যোগাযোগ নম্বর তৈরি করা হবে। পুরো দল সেই নম্বর ব্যবহার করবে। তাঁদের কাজ হবে ‘ছদ্ম প্রচারকে’র খোঁজ করা। তাঁদের নিয়ে তৈরি হবে হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ।
বিজেপি সূত্রের খবর, নির্বাচন ঘোষণার পরে ভোটার তালিকার প্রতিটি পাতার জন্য এক জন ‘পৃষ্ঠা প্রমুখ’ নিয়োগ করা হবে। তাঁর অধীনে থাকবেন আরও পাঁচ থেকে ছ’জন। তাঁরা কোনও রকম দলীয় প্রচার সরঞ্জাম ছাড়াই যত দিন না নির্বাচন হচ্ছে, ওই পৃষ্ঠার প্রত্যেকটি ভোটারের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ রাখবেন।
তবে এত আয়োজনের মধ্যে রাজ্য বিজেপির অবস্থা কার্যত ‘নিধিরাম সর্দার’! অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের খুব একটা ভূমিকা থাকছে না। পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফেই। আর নজরদারিতে থাকবেন স্বয়ং শাহ।
এত সেনা নিয়ে সমরে নেমে বিজেপির বঙ্গ বিজয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে রাজনৈতিক শিবিরে। কারও কারও মতে, এর ফলে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে! তবে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে, নির্বাচনী যুদ্ধে তাঁরা কোনও রকম আপস করতে রাজি নন। বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, “দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বার বাংলাকে লক্ষ্যবস্তু করে নিয়েছেন। আর কিচ্ছু করার নেই! এ বার ক্ষমতায় আসার জন্য যা করা প্রয়োজন, তা-ই করা হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)