E-Paper

নবাব-ভূমে জমি প্রসারে শুভেন্দু, সংশয়ে তৃণমূল

জমি প্রসারের আশা দেখছে বিজেপি। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে আশা-আশঙ্কার দোলাচল। আর খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেস শিবিরও।

 সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০৫:১০
শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের নানা এলাকায় এখন এমন পোস্টার।

শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের নানা এলাকায় এখন এমন পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।

অশান্তির জেরে তৈরি হওয়া ধ্বংসস্তূপে এখন মেরামতির কাজ চলছে। বিধানসভা ভোটের আর যে হেতু এক বছরও বাকি নেই, তাই নবাব-ভূমে গোলমালের পরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসেবও। ঘটনার পরে আরও জমি প্রসারের আশা দেখছে বিজেপি। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে আশা-আশঙ্কার দোলাচল। আর খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেস শিবিরও।

কেন্দ্রের সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদকে ঘিরে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক অশান্তি ও হিংসার পরে শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান, সুতির নানা মহল্লায় এখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নামে ব্যানার-পোস্টার মাথা তুলেছে। ওই এলাকায় ভেঙে যাওয়া মন্দির পুনর্নির্মাণে টাকা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা, পাড়ায় পাড়ায় সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় পা রাখার আগেই এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে সব রকম সাহাষ্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিরোধী নেতা। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ে জাফরাবাদের নিহত বাবা-ছেলের পরিবার এলাকায় থাকেনি। কলকাতায় এসে শুভেন্দুর তত্ত্বাবধানেই হাই কোর্টে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছেন স্বামীহারা শাশুড়ি-বৌমা। গোটা ঘটনার পরে শুভেন্দুর দাবি, ‘‘সাচ্চা হিন্দুরা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই রকম আগে কখনও হয়নি। এর পরে ভোটে এই এলাকার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে সুদে-আসলে জবাব বুঝিয়ে দেবেন!’’

কংগ্রেসের ‘গড়’ ভেঙে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে এক সময়ে শক্ত জমিতে দাঁড় করিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখানেই এখন আবার তৃণমূলকে কোণঠাসা করে বিজেপির জমি তৈরি করতে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাঁকেই। সংগঠক হিসেবে মুর্শিদাবাদ যে শুভেন্দুর চেনা তালুক, একান্ত আলোচনায় স্বীকার করে নিচ্ছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশও। তবে শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপি নেতা হিসেবে শুভেন্দু এ বার নিশানা করেছেন বামেদের সঙ্গে থাকা হিন্দু ভোটকেও। জাফরাবাদে নিহত বাবা-ছেলের পরিবার সিপিএম সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও তাদের দ্রুত নিজের ছাতায় তলায় নিয়ে আসা সেই কৌশলেরই অঙ্গ।

সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর অঞ্চলে বহু দিন ধরেই তলায় তলায় কাজ করে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলার তিন আসন জঙ্গিপুরে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার, বহরমপুরে ৩ লক্ষ ৭১ হাজার এবং মুর্শিদাবাদে ২ লক্ষ ৯২ হাজার ভোট পেয়েছে বিজেপি। গোলমালের পরে শমসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের কিছু এলাকায় আরএসএস এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ শিবির খুলে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। তারই পাশাপাশি দল হিসেবে বিজেপিও হিন্দুত্বের হাওয়া ধরে রাখতে মুর্শিদাবাদে নজর দিয়েছে। দলের তিন সাংগঠনিক জেলা জঙ্গিপুর, বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদের তিন সভাপতি সুবল ঘোষ, মলয় মহাজনও সৌমেন মণ্ডলকে বিধানসভা ভোট মাথায় রেখে সংগঠনকে ‘সক্রিয়’ রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতির জেরে কিছুটা চাপেই আছে শাসক শিবির। গত বিধানসভা ভোটে উত্তর মুর্শিদাবাদের সব আসনেই ভাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ বা সুতির পঞ্চায়েত ও পুরসভাতেও তারা নিরঙ্কুশ। কিন্তু গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় (মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত) কংগ্রেস এগিয়ে গিয়েছে যথাক্রমে ৫০ হাজার ৮৩৪ ও ১৩ হাজার ৮১৪ ভোটে। তিন বছরের ব্যবধানে তৃণমূল শমসেরগঞ্জে প্রায় ৪০ হাজার এবং ফরাক্কায় এক লক্ষেরও বেশি ভোট হারিয়েছে। লোকসভা ভোটের হিসেবে জঙ্গিপুর বিধানসভায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি, রঘুনাথগঞ্জে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের ব্যবধান নেমে এসেছে চার হাজারেরও কম ভোটে। অধীর চৌধুরী, ইশা খান চৌধুরী-সহ কংগ্রেস নেতাদের দাবি, তৃণমূলের ভোট কমেছে এবং কংগ্রেসের বেড়েছে বলেই ‘নির্দিষ্ট কিছু এলাকা’য় এমন অশান্তি ঘটতে দেওয়া হয়েছে। অধীরের মতে, ‘‘এই হামলা শাসক দলের প্রত্যক্ষ মদত ও প্রশ্রয়ে ঘটেছে। কাদের নির্দেশে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হল? প্রকৃত ক্ষতি হয়েছে উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের। ভোটের জন্য বারবার এই ভাগাভাগি করছে তৃণমূল ও বিজেপি।’’

তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি খলিলুর রহমান অশান্তির সঙ্গে দলের যোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকারের দাবি, ‘‘বিভাজনের ছক বিজেপির সব সময়েই থাকে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের মাটিতে বিভাজনের চেষ্টা সফল হবে না।’’ দলের একাংশের আশা, শুভেন্দুরা যত উগ্র হিন্দুত্বের রব তুলবেন, মুসলিম সমর্থন তত এককাট্টা হয়ে মমতার সঙ্গেই থাকবে। আবার অন্য একাংশের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক ঘটনায় পুলিশ এবং শাসক দলের নেতাদের অনেকের ভূমিকার প্রেক্ষিতে সংখ্যালঘুদের কিছু অংশের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy