Advertisement
E-Paper

ছাউনি ভাঙার তদন্তে এল কেন্দ্র, রাজ্যের তোপে উদ্যোক্তারা, বিজেপি বলছে ষড়যন্ত্র

সোমবার থেকেই ইঙ্গিত ছিল এই ঘটনার তদন্তে রাজ্যের ওপর আদৌ ভরসা করতে চায় না কেন্দ্র। মঙ্গলবার সকালেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিশেষ সচিব আরতি ভাটনগরের নেতৃত্বে তিনজনের তদন্তকারী দল নবান্নে পৌঁছন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ২০:২৭
মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে ভেঙে পড়া ছাউনি। ছবি: পিটিআই।

মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে ভেঙে পড়া ছাউনি। ছবি: পিটিআই।

মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে ছাউনি ভেঙে বিপত্তির পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজ্য প্রশাসন—আলাদা আলাদা তদন্তও শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তার পরও স্পষ্ট হয়নি গোটা ঘটনার পিছনে দায় কার। উল্টে উঠে এসেছে ষড়যন্ত্রর তত্ত্ব। গোটা ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সামনে আসছে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন।

সোমবার থেকেই ইঙ্গিত ছিল এই ঘটনার তদন্তে রাজ্যের ওপর আদৌ ভরসা করতে চায় না কেন্দ্র। মঙ্গলবার সকালেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিশেষ সচিব আরতি ভাটনগরের নেতৃত্বে তিনজনের তদন্তকারী দল নবান্নে পৌঁছন।

তত ক্ষণে রাজ্য প্রশাসন সভার উদ্যোক্তা, ডেকরেটর এবং ঠিকাদারদের দায়ী করেছে বিপত্তির জন্য। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের আদৌ সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

মেদিনীপুরে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভার শেষে ভেঙে পড়ে দ্বিতীয় কাঠামোটিও। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

রাজ্য প্রশাসনকে তাঁরা জানান, এই সভার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, সবার সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছন ভাটনগর এবং তাঁর সঙ্গী দুই এসপিজি আধিকারিক। বৈঠকে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও ডাকা হয় জেলাশাসককে। ডাকা হয় পূর্ত দফতর, দমকল, বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের, যাঁরা এই সভার জন্য রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্বে ছিলেন। ডাকা হয় ডেকরেটর, ঠিকাদারদেরও। সভার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জেলা বিজেপির একটি দলকেও ডাকা হয় এই বিশেষ বৈঠকে। বাদ যাননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও।

এই বৈঠকেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে বিজেপি। সূত্রের খবর, বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সুমিত দাশ কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, পুলিশ মাত্র একবার তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তার পর তাঁরা পরিদর্শন দূরে থাক, সিসি ক্যামেরা কোথায় বসবে সেটারও দায়িত্ব নিতে চায়নি। সভার ভিড় সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় সিভিক পুলিশকে। সব মিলিয়ে পুলিশকেই গোটা অব্যবস্থার জন্য দায়ী করে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তারা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সেই একই সুর রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর। তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে যত বার এ রাজ্যে এসেছেন, তত বার কোনও না কোনও বিপত্তি হয়েছে। শান্তিনিকেতনে তাঁর মঞ্চে নিরাপত্তা ভেঙে উঠে এলেন একজন আগন্তুক। মেদিনীপুরে এই ঘটনা।”

বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ কোনও ভাবে সহযোগিতা করেনি। সায়ন্তনের অভিযোগ, “যখন ভেঙে পড়ছে ওই কাঠামো, তখন পুলিশ ভিড় সামলানো দূরে থাক, উল্টে লাঠি চার্জ করে।” তাঁর প্রশ্ন, “যখন লোকজন ছাউনির ওপর উঠছে, তখন পুলি‌শ আটকায়নি কেন? সেই সময় এসপিজি জেলা পুলিশ সুপারকে ফোন করলেও ফোন ধরেননি।” সায়ন্তন অসহযোগিতার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে পৌঁছে গেলেন। অথচ সেখানে জেলা শাসক, পুলিশ সুপার পৌঁছতে পারলেন না।”

এই অভিযোগ যে খুব হাল্কা ভাবে কেন্ত্রীয় তদন্তকারী দল নিচ্ছে না, তা মঙ্গলবার তাঁদের ম্যারাথন জেরা থেকেই বোঝা যায়। দুপুর আড়াইটেয় শুরু হয় দফায় দফায় বৈঠক। রাত আটটাতেও সেই বৈঠক শেষ হয়নি। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় দল বারে বারে জানার চেষ্টা করেন, সভার প্রস্তুতি পর্বে রাজ্যের বিভিন্ন দফতর কী কী বিষয়ে তদারকি করেছেন। তবে তাঁরা কী খুঁজে পেয়েছেন, বা কী সন্দেহ করছেন, তা এখনও জানা যায়নি।

সন্ধ্যায় ভেঙে পড়ে এই পাঁচিল। সভা চলাকালীন ভেঙে পড়লে বিপত্তি বাড়তে পারত। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

যদিও সেই বৈঠকের মধ্যেই নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্টে ষড়যন্ত্রের সম্ভবনা উড়িয়ে দিয়ে, ডেকরেটর এবং উদ্যোক্তাদের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, তাঁরা না থাকলে বিপত্তি আরও বড় হতে পারত। অর্থাৎ বিজেপির সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকে। তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এই ম্যারাথন তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ ফের সংঘাতের আবহই তৈরি করছে বলে মনে করছেন আমলাদের একাংশ।

Narendra Modi Prime Minister BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy