ফাইল চিত্র।
বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলে চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কার্যত দলের উপরতলার দিকে আঙুল তুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলীয় মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টির কোনও বড় প্রভাব পড়বে না বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু দিলীপ এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যাঁরা আমার সম্পর্কে দিল্লিতে ক্ষোভ উগরে দিতেন, তার ফলে কয়েক জনকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, আমাকেও প্রায় তাড়িয়ে দেওয়া হয় আর কী! যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী হতে এসেছিলেন, তাঁরা কোথায় গেলেন, সেই প্রশ্ন শীর্ষ নেতাদের করে এসেছি।’’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘বিজেপি একটা বহমানতা। অদূর ভবিষ্যতে আসানসোলে বিজেপির প্রার্থীই জিতবেন। মানুষ আয়ারাম গয়ারামের রাজনীতি পছন্দ করেন না।’’
প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল-সহ অন্য দল ছেড়ে নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের বিজেপিতে যোগদানের ঢল দেখা গিয়েছিল। তখন বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টিকে ‘আয়ারাম গয়ারামের অন্য দল ছেড়ে নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের বিজেপিতে যোগদানের ঢল দেখা গিয়েছিল। তখন বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টিকে ‘আয়ারাম গয়ারামের রাজনীতি’ বলতেন না। এখন বিজেপি ছেড়ে বিধায়ক, সাংসদরা তৃণমূলে চলে যাওয়ায় তাঁরা ওই বিশেষণ ব্যবহার করছেন। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শমীকের যুক্তি, ‘‘বিজেপি তৃণমূল বা অন্য দল থেকে কাউকে ভাঙিয়ে আনেনি। রাজ্যে পরিবর্তনের আশায় অনেকে স্বেচ্ছায় এসেছিলেন। তৃণমূলও বাবুলকে ভাঙিয়ে নিয়ে যায়নি। তিনি স্বেচ্ছায় এবং নাটকীয় ও রহস্যজনক ভাবে সে দলে গিয়েছেন।’’
বাবুল তৃণমূলে যোগদানের পরে দিলীপ বলেন, ‘‘উনি সাংসদ এবং মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু দলের কর্মী হতে পারেননি। যাঁদের মাথায় করে নাচা হয়েছে, তাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন আর খবর হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা দলের জন্য মার খাচ্ছেন, ঘরছাড়া হচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে খবরও নেই, কারও কষ্টও নেই।’’
গত ১০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের নাম ঘোষণার পরে বাবুল সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানান। প্রিয়ঙ্কা তাঁর হাত ধরেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বলেও জানান বাবুল। ভবানীপুরের জন্য বিজেপির তারকা প্রচারকদের তালিকাতেও বাবুলের নাম ছিল। যদিও বাবুল জানিয়েছিলেন, তিনি প্রিয়ঙ্কার প্রচারে আসবেন না। ভবানীপুরের উপনির্বাচনের মুখে এ দিন বাবুলের দল বদলের পরে ওই কেন্দ্রে বিজেপি ধাক্কা খেল বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত। শমীক অবশ্য বলেন, ‘‘বাবুল তৃণমূলের প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন। তাই তাঁকে তারকা প্রচারকদের তালিকায় রাখাই স্বাভাবিক। তবে ভবানীপুরে বিজেপি-র কাছে বাবুল চ্যালেঞ্জ নন।’’
পাশাপাশি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘বাবুল সংগঠক নন। তিনি বিজেপি ছাড়ায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ বাবুল কেন বিজেপি ছাড়লেন বলে তাঁরা মনে করেন? শমীকের বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রিত্বটাই ওঁর কাছে প্রধান ছিল। সেটা চলে যাওয়ায় উনি আসানসোলের জনাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। বিজেপির আস্থা এবং নিজের ভাবমূর্তি ও প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও প্রতারণা করলেন। রাজনীতিতে কাজ করতে হলে সারা জীবন মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি থেকে যেতেই হবে, এটা কোনও সুস্থ ভাবনা নয়।’’ একই সঙ্গে শমীক জানান, বাবুল দল ছাড়লেও তাঁকে বিজেপি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করে না।
বাবুলের দলবদলের প্রসঙ্গে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে খোঁচা দিয়েছে বাম এবং কংগ্রেস। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজনীতিতে আজ বিজেপি, কাল তৃণমূল— এটা কোনও নীতিগত অবস্থান নয়। মেরুদণ্ড থাকলে কেউ এমন ভাবে চলেন না। যিনি ক’দিন আগে বলতেন, নরেন্দ্র মোদীর চেয়ে বড় নেতা দেশে আর নেই, তিনিই আজ বলবেন মোদী কত স্বৈরাচারী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কত ভাল। যেন ব্যবসায় মুনাফা করতে আসা। এটা বিপজ্জনক। আর তৃণমূল এবং বিজেপি য়ে পরস্পরের ঘরে স্বচ্ছন্দ, সেটাও ফের প্রমাণিত।’’ পাশাপাশি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘বিজেপির ক্ষয় হচ্ছে, সেই সুযোগে তৃণমূলের শক্তি বাড়ছে, এটাই এখন বাংলার চেহারা। সারা জীবন মন্ত্রিত্ব থাকবে, এই ভাবে আমরা রাজনীতি করি না। এটা নৈতিকতার বিষয়। আমরা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করব, কংগ্রেস করুন। কংগ্রেসকে দুর্বল বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসে এলে কারও গোলামি করতে হবে না।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছিলেন বাবুল। ওই পড়ুয়ারা বিজেপি-বিরোধিতাতেই সরব হয়েছিলেন। এ দিন বাবুল তৃণমূলে নাম লেখানোর পরে প্রশ্ন উঠেছে, এ বার কি যাদবপুরে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে প্রাক্তন বিজেপি নেতাকে? এসএফআইয়ের দখলে থাকা যাদবপুরের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন তীর্ণা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘তৃণমূল, বিজেপি একই মুদ্রার দুই পিঠ। তাই দল বদলের পরেও ওঁর প্রতি আমাদের মনোভাব একই থাকবে। সে দিন রাজ্যপাল বাবুলকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। জানতে ইচ্ছে করছে, আজ রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া কী?’’
বাবুলকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে সে দিন আহত হন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক হিন্দোল মজুমদার। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিষধর সাপ খোলস পাল্টালেও বিষধরই থাকে।’’ ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘যাদবপুরের নিজস্বতা এবং আত্মমর্যাদা আছে। যিনি তাকে নষ্ট করতে আসবেন, যাদবপুর তাঁকে আটকাবে।’’
বাবুলকে তৃণমূলে নেওয়া ঠিক হয়নি বলে বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘বাবুলকে এর আগে নানা বিদ্বেষপূর্ণ প্ররোচনা, উস্কানি দিতে দেখা গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব এটা মাথায় রাখলে পারতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy