দীর্ঘ চাপানউতোরের জেরে রামনবমীর এক দিন আগে, শনিবারই উদযাপনের ছোঁয়া লেগে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। সেই সূত্রেই পরস্পরকে দায়িত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। অন্য দিকে, তাদের এই ভূমিকাকে ভোটের লক্ষ্যে ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি বলেই উল্লেখ করছে সিপিএম, কংগ্রেস। রামনবমী উদযাপনে আজ, রবিবার শান্তিরক্ষাই পরীক্ষা তৃণমূল ও বিজেপির।
গত কয়েক দিন ধরেই রামনবমী ঘিরে ঊর্ধ্বমুখী রাজ্য রাজনীতির পারদ। রাজ্য প্রশাসনকে তা-ই নিয়ে এ দিনও নিশানা করেছে বিরোধীরা। রানাঘাটে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘কেন এ নিয়ে আশঙ্কা থাকবে? কারণ, ২০২৩, ২০২৪ সাল থেকেই অভিজ্ঞতা ভাল নয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডা আর পুলিশ বাড়িতে থাকলে রামনবমী শান্তিপূর্ণ হবে! এই তো কয়েক দিন আগে ইদ পালিত হয়েছে। কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি। কারণ আমরা পরধর্মসহিষ্ণু।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন রামনবমী উদযাপনের জন্য ২১ দফা নির্দেশিকা দেওয়া হবে?’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, ‘‘এই রকম পরিবেশ ছিল উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বদলেছে। এখানেও বদল হবে।’’ সেই সঙ্গেই রামনবমীর মিছিলে হিন্দুদের শক্তি দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন শুভেন্দু।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘রামনবমী উপলক্ষে লক্ষ হিন্দু রাস্তায় নামবেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে দিনটি পালন করুন।’’ আজই নন্দীগ্রামে একটি রামমন্দিরের শিলান্যাস করার কথা রয়েছে শুভেন্দুর।
নাম না করে পাল্টা বিজেপির দিকেই আঙুল তুলেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এত পুজো, ইদ, অন্য ধর্মের এত এত অনুষ্ঠান, এ রাজ্যে সব শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়। কিন্তু এই রামনবমী নিয়ে এত উত্তেজনা তৈরি করা হয় কেন? কারণ, বিজেপি এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতি করতে চাইছে।’’ দু’একটি জায়গায় অস্ত্র হাতে মিছিলের মহড়া নিয়ে বিজেপি নেতাদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা প্ররোচনা ছড়াতে চান, মানুষ তাঁদের দেখছেন।’’ সুকান্তও পুলিশের উদ্দেশে বলে রেখেছেন, ‘‘কড়াকড়ির নাম করে বিঘ্ন ঘটানো বা আটকানোর চেষ্টা করবেন না।’’
সরাসরি দলীয় কোনও কর্মসূচি না-থাকলেও রাজ্যের নানা জায়গায় ধর্মীয় বা সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে রামনবমী উদযাপনে গত কয়েক বছর ধরেই শামিল হচ্ছেন তৃণমূ্লের নেতা-কর্মীদের একাংশ। সূত্রের খবর, এ বারও সেই দৃশ্য দেখা যেতে পারে।
রানাঘাটে শুভেন্দুর এ দিনের কর্মসূচির আগে কালো পতাকা লাগানো ও বিজেপির পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারব না! এ সব আগে উত্তরপ্রদেশে হতো। এখন হয় না। এখানেও পরিবর্তন হবে।’’
রাজ্যের সম্প্রীতির ঐতিহ্য মনে করিয়ে দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর আবেদন, ‘‘নিজের বিশ্বাস মতো যে যাঁর ধর্ম পালন করবেন। এ রাজ্যে তা শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। আশা করব, সকলেই সেই দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’’ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মতো এসএফআই রাজ্যের ৩০০ জায়গায় শান্তিরক্ষায় শিবির করছে। শান্তি বজায় রেখে দিনটি উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)