শিলিগুড়িতে বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
ভোটের আগে নিয়ম করে বাঙালিয়ানা ও বাঙালি মহর্ষিদের কথা উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তাই স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৮ তম জন্মবার্ষিকী পালনেরও যে গেরুয়া শিবির ঝাঁপিয়ে পড়বে, আগেই তা বোঝা গিয়েছিল। মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে তেমনই ছবি উঠে এল। বালুরঘাট থেকে চুঁচুড়া, ঝাড়গ্রাম থেকে বারাসত, বিবেকানন্দ ভক্তিতে গা ভাসিয়ে দিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতা এবং সমর্থকরা।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে এ দিন বালুরঘাটের মঙ্গলপুরে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান করেন বিজেপি জেলা সভাপতি বিনয় বর্মন, বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, বালুরঘাট শহরের মন্ডল সভাপতি সুমন বর্মন-সহ দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা। সেখানে বিজেপি-র জেলা কার্যালয়েও বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করা হয়। বালুরঘাট পৌরসভার তরফেও মঙ্গলপুরে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়।
পিছিয়ে ছিল না শাসকদলও। ঝাড়গ্রামে এ দিন সাড়ম্বড়ে বিবেকানন্দের জন্মদিন পালিত হয়। রবীন্দ্রপার্ক থেকে ‘বিবেক চেতনা’ উৎসবের পথযাত্রা শুরু হয়ে ঘোড়াধরা পার্কে শেষ হয়। ব্যবস্থাপনায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া দফতর। এ দিনের বিবেক চেতনা উৎসবের পদযাত্রায় পা মেলান ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানি, ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস, ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ বেদ পুরুষানন্দ এবং ঝাড়গ্রাম পৌরসভার প্রশাসক প্রশান্ত রায়।
একই ছবি ধরা পড় মেদিনীপুর জেলায়। রামকৃষ্ণ মিশনে রীতি মেনে শ্রদ্ধা জানানো হয় বিবেকানন্দকে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছবিতে মাল্যদান করে দিনটি পালন করা হয়। ‘বিবেক চেতনা’ উৎসবে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য সীমিত সংখ্যক মানুষকে নিয়ে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগের বছর আরও বড় করে অনুষ্ঠান হবে। বিবেকানন্দ কেবলমাত্র ভারতবর্ষের গর্ব নয়, তিনি গোটা বিশ্বের গর্ব। তাঁকে কেবল ১২ই জানুয়ারি স্মরণ করলে হবে না, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্মরণ করতে হবে।’’ মেদিনীপুর শহরে বটতলা চক এলাকায় বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান করতে দেখা যায় তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলের কর্মীদেরই।
জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও বিবেকানন্দের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ধূপগুড়ি পৌরসভার তরফে যদিও আয়োজন ছিল ছিমছামই। সকালে পৌরসভার ৬ এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন পৌরসভার চেয়ারপার্সন ভারতী বর্মন, ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ সিংহ-সহ কাউন্সিলর এবং স্থানীয়রা নেতারা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিবেকানন্দের মূর্তির পাদদেশে একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পৌরসভা এলাকার প্রায় ১০০ দুঃস্থ এবং অসহায় মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। পৌরসভার চেয়ারপার্সন ভারতী বর্মন বলেন, ‘‘ এবার পৌরসভার উদ্যোগে ছোট করে স্বামীজির জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। তারপরও এ বার আমরা প্রায় শতাধিক দুঃস্থ মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দিলাম।’’ ধূপগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘স্বামীজির আদর্শ, নীতি ছড়িয়ে দিতে আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত কেন্দ্রের। সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের মতো বিবেকানন্দেরও মূর্তি বসানো উচিত।’’
জলপাইগুড়ি শহরে রামকৃষ্ণ মিশনের গাড়িতে প্রতি বছরের মতো এ বারও রথযাত্রা বার করা হয়। তবে করোনার কারণে এই বছর শোভাযাত্রায় জাঁকজমক ছিল না। জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম কর্তৃপক্ষ রীতিমতো সামাজিক দুরত্ববিধি বজায় রেখে, টোটো এবং বাইক র্যালির মধ্য দিয়েই বিবেকানন্দর বাণী প্রচারের উদ্যোগ নেন।
তবে বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকীকে পালনের বাহানায় রাজনৈতিক দলগুলি আসলে ভোটের প্রচারে নেমেছে, এমন অভিযোগও উঠে আসছে। কারণ বিবেকানন্দের জন্মদিনের উৎসবে গিয়েও একে অপরকে তীব্র আক্রমণ করতে দেখা যায় বিভিন্ন দলের নেতাদের। বারাসতে বামেদের বাইক মিছিলে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় কৃষি আইন বাতিল করার দাবি তোলেন। বারাসতের সুভাষ ইনস্টিটিউট হল থেকে বিজেপির সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘কাটমানি ও চাল চোর সরকারের কাছ থেকে বিবেকানন্দ সম্পর্কে শেখার প্রয়োজন নেই। ব্রাত্য বসু রাজনীতি করেন কি না, তা-ই জানি না আমি। উনি কোন দফতরের মন্ত্রী, তা-ও আমার জানা নেই। তবে, স্বামীজিকে নিয়ে রাজনীতি হলে ভালই। কে জানে মরা মরা বলতে বলতে যদি মুখে রাম রাম ফোটে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy