চলতি পর্বে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রথম হয়েছে বিহারে এবং তার পরের নির্বাচনেই বিপুল জয় পেয়েছে এনডিএ। কার্যত কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই এসআইআর প্রক্রিয়ায় এবং পরে ভোটের সময়ে দলের হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসা বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিহার বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের মতে, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় থেকে বুথ স্তরে নেতা-কর্মীরা ঠিক ভাবে কাজ না করে থাকলে ভোটে ‘মসৃণ’ জয় আসত না। পশ্চিমবঙ্গে এখন এসআইআর প্রক্রিয়ায় এবং এর পরে বিধানসভা ভোটে দলের বিএলএ-রা যাতে মাটি কামড়ে থাকেন, সেই বার্তাও দিতে চান বিজেপি নেতৃত্ব।
বিহারে যখন এসআইআর-এর প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলের বিএলএ-দের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, দক্ষিণের রাজ্য কেরলে আবার নতুন করে ‘চাপে’ পড়েছেন বুথ লেভল অফিসারেরা (বিএলও)। পশ্চিমবঙ্গের মতো কেরলেও ভোটারদের গণনা-পত্র জমা নেওয়া চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী আধিকারিকেরা ( জেলাশাসক) নির্দেশ দিয়েছেন, মঙ্গলবারের মধ্যে ভোটারদের পূরণ করা গণনা-পত্র নিয়ে নিতে হবে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য বিএলও-দের এখন গণনা-পত্র ‘ডিজিটাইজ়’ করার উপরে নজর দিতে হবে। বাড়ি থেকে নয়, মঙ্গলবারের পরে ভোটারদের গণনা-পত্র জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে গিয়ে। এমন পদক্ষেপের জেরে চাপে পড়েছেন বিএলও-রা। তাঁদের পক্ষে সরব হয়েছে শাসক সিপিএম ও বিরোধী দল কংগ্রেস। সুপ্রিম কোর্টে কেরলের দুই শাসক ও বিরোধী এবং অন্যান্য রাজ্যের আরও কিছু দলের দায়ের করা এসআইআর-সংক্রান্ত মামলার শুনানির আগেই নির্বাচন কমিশন গণনা-পত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চাইছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এসআইআর এবং ভোটে বুথ স্তরে সাংগঠনিক সক্রিয়তার উপরেই মনোনিবেশ করছেন। বিহারের নির্বাচনে এনডিএ শিবিরের হেঁশেল সামলে কৌশল ঠিক করার দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক পর্যবেক্ষক বিনোদ তাওড়ে, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছিলেন ধর্মেন্দ্র প্রধান। গোড়া থেকেই শাহের নির্দেশ ছিল বুথ ও এলাকাভিত্তিক লক্ষ্য ধরে এগোনোর। সূত্রের খবর, শাহের মত নিয়েই তাওড়েরা এ বার ভোটের পরে বিএলএ-দের ভূমিকাকে ‘স্বীকৃতি’ দিতে চাইছেন। পটনার বীর চাঁদ পটেল মার্গে বিজেপির রাজ্য দফতরে আগামী ২৯ নভেম্বর বিহারের ২৪৩ বিধানসভা কেন্দ্রের বিএলএ-দের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা দলের রাজ্য নেতৃত্বের। তার পরে জেলা নেতৃত্ব আবার স্থানীয় স্তরে বিএলএ-২’দের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করবেন।
বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জায়সওয়ালের মতে, ‘‘এসআইআর-এর সময়ে দলের বিএলএ-রা গুরুত্ব সহকারে ভূমিকা পালন করেছেন। মৃত ও ভুয়ো ভোটার বা কারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, সে সব চিহ্নিত করতে কমিশনের কাজে সহায়তা করেছেন। বিএলএ-১’রা বিএলএ-২’দের সঙ্গে সমন্বয় রেখেছেন। আবার ভোটের দিন বুথে দলের দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছেন। এঁরাই দলের সম্পদ, সাফল্যে এঁদের ভূমিকাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ প্রসঙ্গত, ভোটে জিতে শিল্পমন্ত্রী হয়ে যাওয়ায় ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে দিলীপকে বিহার রাজ্য সভাপতি পদ ছাড়তে হবে কি না, সেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে বিজেপিতে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের ছেলে, গত বারের শিল্পমন্ত্রী নীতীশ মিশ্র এ বার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ গিয়েছেন। সরকারে ও দলে নীতীশ ও দিলীপের স্থান বদল হবে কি না, চর্চা চলছে। জল্পনায় অবশ্য রয়েছে আরও কয়েকটি নাম।
এরই মধ্যে কেরলে গণনা-পত্র পূরণে ‘তাড়াহুড়ো’ নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ়্যাক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এসআইআর-এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে। নিশ্চিত ভাবে আত্মহত্যার ঘটনা ৮। তার পরেও কমিশন আর দু’দিনের মধ্যে গণনা-পত্র পূরণের জন্য চাপ তৈরি করছে কেন? সুপ্রিম কোর্টে মামলার দিকে তাকিয়ে?’’ কেরলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রতন ইউ কেলকর অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, গণনা-পত্র জমা দেওয়ার সময় ৪ ডিসেম্বর পর্যন্তই আছে। খসড়া তালিকা তৈরির কাজে বেশি সময় হাতে রাখার জন্য জেলাশাসকেরা কোথাও কোথাও বিএলও-দের তৎপরতা বাড়াতে বলছেন। তাঁর দাবি, এর মধ্যে ‘চাপ’ দেওয়ার প্রশ্ন নেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)