E-Paper

প্রার্থী খুঁজতে বুথের শক্তি মাপবে বিজেপি

সূত্রের খবর, ১ থেকে ৭ মার্চ বুথ শক্তিশালী করতে কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। পঞ্চায়েতের আগে বুথগুলির সাংগঠনিক অবস্থা বুঝে নিতেই এই অভিযান।

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪৫
Representational image of BJP.

১ থেকে ৭ মার্চ বুথ শক্তিশালী করতে কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। প্রতীকী ছবি।

রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। তার আগে বুথের শক্তি মাপতে নামছে বিজেপি। যার উপরে নির্ভর করবে আসন্ন নির্বাচনে আদৌ কতগুলি পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে পারবে দল। কারা প্রার্থী হতে পারেন, তার একটা প্রাথমিক ‘স্ক্রিনিং’ও শুরু করে দিতে চাইছে তারা।

সূত্রের খবর, ১ থেকে ৭ মার্চ বুথ শক্তিশালী করতে কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। পঞ্চায়েতের আগে বুথগুলির সাংগঠনিক অবস্থা বুঝে নিতেই এই অভিযান। কর্মসূচি থেকে পাওয়া তথ্য ‘সরল’ অ্যাপে (বুথের তথ্য নেওয়ার জন্য বিজেপির নিজস্ব অ্যাপ) নথিবদ্ধ করতে হবে। এর ফলে আদৌ ক’টা বুথে বিজেপির লোক আছে, তারও একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। সেই অনুযায়ী হবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ।

এর আগে ঘরোয়া বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী বাছাইয়ের একটি ফর্মুলা দিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্বকে। সূত্রের খবর, সেখানে বলা হয়েছিল, আগের বার পঞ্চায়েতে যাঁরা জিতেছিলেন, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরাই এগিয়ে থাকবেন। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে বিজেপি প্রার্থী জিতলেও তিনি দল পরিবর্তন করেছেন। সেই সব পঞ্চায়েতে দলের পুরনো কর্মী যাঁরা আছেন, তাঁরা টিকিট পাওয়ার দাবিদার হবেন। হেরে যাওয়া পঞ্চায়েতগুলির ক্ষেত্রে যাঁরা দীর্ঘ দিন সরাসরি বিজেপি কিংবা সমমনষ্ক কোনও সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের প্রার্থী করা হবে। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে দলের সম্ভাবনা থাকলেও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে না। সেখানে স্থানীয় জনপ্রিয় মুখ বা শাসক দলের ‘দুর্নীতি’র কারণে পরিষেবা থেকে সরাসরি ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন, এমন কাউকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সূত্র মেনে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব নেবে কে? সাধারণত বিজেপিতে সাধারণ নির্বাচনে আসনভিত্তিক তিন-চার জনের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে পৌঁছয় দলের সদর দফতরে। তার পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন ক্রমে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়। অমিত শাহ দলের সভাপতি থাকাকালীন একটি সমীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছিলেন। তবে সেই সমীক্ষার সঙ্গে প্রার্থী বাছাইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের আগে এবং পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ’ করে নেতৃত্বকে রিপোর্ট দেওয়াই মূলত সেই সমীক্ষক দলের কাজ। তবে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্য সেই বালাই নেই। সে ক্ষেত্রে জেলা দফতরগুলিতে একটি বাক্স রাখা থাকে। ইচ্ছুক প্রার্থীরা নিজেদের নাম, জীবনপঞ্জি ও আসনের বিবরণ দিয়ে সেখানে জমা দিয়ে যান। এর পরে অঞ্চল কমিটি ও মণ্ডল কমিটির আলোচনার ভিত্তিতে আসন পিছু বেশ কিছু নাম জেলা দফতরে জমা পড়ে। তার পরে জেলা নেতৃত্ব সাংগঠনিক ভাবে আসা নাম ও ‘ড্রপ বক্সে’ জমা পড়া নাম নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেন।

সূত্রের খবর, এই পদ্ধতি মানতে গিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজে হোঁচট খেতে হচ্ছে নেতৃত্বকে। কারণ দলের নিচু তলার সংগঠন। সব বুথে দলীয় কমিটি গঠন তো দূরের কথা, অনেক জায়গায় অঞ্চল কমিটি কিংবা মণ্ডল কমিটি পর্যন্ত গঠন হয়নি। অনেক জায়গায় খাতায় কলমে কমিটি হলেও তা হয় নিষ্ক্রিয়, না হয় দুর্বল। ফলে, তাদের উপরে ভরসা করে প্রার্থী বাছাই কত দূর সম্ভব, তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই। যদিও পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেওয়া সম্ভব বলে দাবি করেছেন দলের পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত রাজ্য স্তরের কমিটির আহ্বায়ক তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। তিনি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরে যে সন্ত্রাস হয়েছিল, সে কারণে অনেকেই বসে গিয়েছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। জানুয়ারির মধ্যে আমরা সব জায়গায় মণ্ডল কমিটি গঠন করেছি। অঞ্চল কমিটি হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করব।’’ তবে সব বুথে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে তাঁরও। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ বুথেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। কিছু বুথ আছে যেগুলি ১০০% সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সেখানে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে।”

নিচু তলায় সংগঠন মজবুত না থাকায় প্রার্থী বাছাইয়ের বরাবরের পদ্ধতি থেকে কি বেরিয়ে আসতে পারে বিজেপি? যদিও তেমন সম্ভবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “দলের প্রার্থী এত দিন যে ভাবে বাছাই হত, সেই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া মেনেই হবে।” সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “অঞ্চল স্তরে, মণ্ডল স্তরে পঞ্চায়েত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বুথ কমিটির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জেলায় নাম পাঠাবে। জেলাই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Panchayat Poll West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy