বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠা বন্ধ হচ্ছে না পুরুলিয়ায়। বলরামপুরে দলীয় এক কর্মীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগের পরে জেলার বরাবাজারেও এক বিজেপি কর্মীকে কুড়ুল দিয়ে কোপানোর অভিযোগে জড়াল শাসকদলের নাম। যার প্রেক্ষিতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতা বা মন্ত্রী, যে-ই হোন, তাঁর সুরক্ষা সম্পর্কে তৃণমূলকে ভাবতে হবে। মানুষ প্রতিরোধের চেষ্টা করলে ভাল হবে না। গায়ের জোরে পুরুলিয়ায় কিছু করতে গেলে ব্যাপক হিংসা হবে। সেটা ওরা সামলাতে পারবে না।’’ তৃণমূলে যোগ দিতে প্রলোভন ও ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলে দিল্লিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নালিশ জানাতে গিয়েছেন পুরুলিয়ার সদ্য জয়ী বিজেপির ৪০ জন পঞ্চায়েত প্রার্থী। এই আবহে আজ, শুক্রবার জেলায় আসছেন ‘পুরুলিয়াকে বিরোধীশূন্য’ করার ডাক দেওয়া যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বরাবাজারের শিরোমণিপুরের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী বছর পঞ্চাশের গৌরাঙ্গ ওরাং গুরুতর চোট নিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বুধবার বিজয় মিছিল করি। আর রাতেই তৃণমূলের ছেলেরা রাস্তায় আটকে ‘বড় বিজেপি নেতা হয়েছিস’ বলে লাঠিপেটা করে। পায়ে কুড়ুলের কোপ মারে।’’ রাতেই তিনি থানায় অভিযোগ করেন। বিজেপির বরাবাজার মণ্ডল সভাপতি লবসেন বাস্কের দাবি, ‘‘এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করার রোষেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গৌরাঙ্গবাবুকে মারধর করে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘ও সব বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।’’
বুধবার সকালে বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামের বিজেপি কর্মী কলেজ পড়ুয়া ত্রিলোচন মাহাতোর দেহ উদ্ধারের পরে তাঁকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। তিনিও ভোটে সক্রিয় ছিলেন। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বলরামপুরে বিজেপির ডাকা বন্ধে ভাল সাড়া পড়ে। বন্ধ ভাঙতে তৃণমূল নামেনি। তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই মৃত্যুতে আমরাও মর্মাহত। তাই বন্ধ রোখার কর্মসূচি ছিল না। তবে তৃণমূল কোনও ভাবেই জড়িত নয়।’’ ঘটনায় কেউ গ্রেফতারও হয়নি।
এ দিকে, ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ তুলছিলেন, পঞ্চায়েতে তাঁদের জয়ী প্রার্থীদের নিজেদের দলে টানতে তৃণমূল প্রলোভন ও ভয় দেখাচ্ছে। তেমন ৪০ জন ও কিছু রাজ্য নেতাকে নিয়ে এ দিনই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বিজেপি সূত্রে খবর, তাঁরা কমিশনে পঞ্চায়েত-সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ জানান। ওই বিষয়ে তাঁদের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলে কমিশন। তারা পঞ্চায়েত-হিংসা সরেজমিনে দেখতে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে প্রতিনিধি দল পাঠাবে বলে জানাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। কৈলাস বলেন, ‘‘দলের কর্মীরা যেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন, আমি যাব। শনিবারই কলকাতায় যাচ্ছি।’’
পঞ্চায়েত ভোট ও তার পরে হিংসার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার রাজ্যে থানা ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। জঙ্গি আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এই পরিস্থিতি চললে প্রয়োজনে বাংলা বন্ধ ডাকার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন দিলীপবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy