E-Paper

বিজেপি কর্মীদের জমিতে চাষে বাধা, অভিযুক্ত তৃণমূল

কোচবিহারের প্রত্যন্ত এলাকা ফুলবাড়ি। মাথাভাঙা বিধানসভার অংশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় সেখান থেকে ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। ২০২১ সালে মাথাভাঙা বিধানসভায় জয়ী হয় বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৬:২৫

—প্রতীকী ছবি।

খেত যেন ধূ ধূ মাঠ। দেখে মনে হবে, কেউ সেখানে চাষ-আবাদ করেন না। কান পাতলে অবশ্য শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। গ্রামের কয়েক জন ভয়ে ভয়েই জানালেন, ফতোয়া চলছে। কীসের ফতোয়া? জবাব মিলল, ‘‘ও সব বিজেপির জমি। তাই চাষ বন্ধ।’’

এমনই অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারের মাথাভাঙার ফুলবাড়ি গ্রামে। গ্রামের বিজেপি কর্মীদের কয়েক জন অভিযোগ করছেন, তৃণমূলের ফতোয়ায় ১২০ বিঘা জমিতে ধান চাষ শুরু করতে পারেননি তাঁরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য স্বপ্না বর্মণের স্বামী রামপদ বর্মণ বলেন, ‘‘আমার পাঁচ বিঘা জমি। কিছু জমিতে পাট রয়েছে। বাকিটায় ধানের বীজতলা করব। তাই ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা প্রয়োজন। ট্রাক্টর মালিক জানিয়েছেন, তৃণমূল থেকে নির্দেশ মিলেছে, যাতে আমার জমিতে চাষ না করা হয়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, তাঁকে তৃণমূলে যোগ দিতে চাপও দেওয়া হচ্ছে।

ওই গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা রামমাধব সরকারও বিজেপি কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচ বিঘা চাষের জমিতে ভুট্টা করেছিলাম। কেটে নিয়েছি। এ বার ধানের বীজতলা করব। কিন্তু কোনও ট্রাক্টরমালিক চাষ দিতে চাইছেন না। আমি তৃণমূলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, আমার জমিতে চাষ করতে দেওয়া হবে। কিন্তু
তা হয়নি।’’

কোচবিহারের প্রত্যন্ত এলাকা ফুলবাড়ি। মাথাভাঙা বিধানসভার অংশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় সেখান থেকে ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। ২০২১ সালে মাথাভাঙা বিধানসভায় জয়ী হয় বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪টি আসনের মধ্যে ২০টি দখল করে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের পরে অবশ্য বিজেপির চার পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপির অভিযোগ, কোচবিহার লোকসভা আসনে তৃণমূলের জয়ের পর থেকেই গ্রামে হুমকি দেওয়া শুরু হয়। পঞ্চায়েত সদস্য ও বিজেপি কর্মীদের চাপ দিয়ে দলবদল করাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। যাঁরা দলবদল করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে চলছে ‘ফতোয়া’।

রাধামাধব বলেন, ‘‘শুধু ট্রাক্টর নয়, পাট কাটার জন্য শ্রমিকও পাচ্ছি না।’’ ওই এলাকার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক্টরের মালিক বলেন, ‘‘আমি নিরপেক্ষ মানুষ। সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষের জমিতে আমি চাষ করি। বিজেপির দশ জনের মতো গ্রাহক রয়েছেন। তাঁদের জমিতে চাষ করতে নিষেধ করেছে তৃণমূল। না হলে জরিমানা করা হবে।’’

অন্য দিকে, তুফানগঞ্জ থানার ধলপল গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ধলপল এলাকার বিজেপি কর্মী প্রফুল্ল দাসের পরিবারকে ‘সামাজিক বয়কট’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রফুল্ল বলেন, ‘‘আমাকে চাষ করতে দিচ্ছে না। ৬ জুন থেকে আমার পরিবারকে সামাজিক বয়কট করে রাখা হয়েছে। থানায় অভিযোগ করেছি।’’ পুলিশ জানায়, এ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

বিজেপির মাথাভাঙার বিধায়ক সুশীল বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা মৌখিক ভাবে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। এ বার এফআইআর করা হবে।’’ বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক অভিযোগ করেন, জেলার প্রায় সর্বত্রই বিজেপি কর্মীদের চাষে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। কাউকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কাউকে দলে যোগদান করানো হচ্ছে। বিজেপির কৃষক মোর্চার কোচবিহার জেলা সভাপতি মুরারী রায় বলেন, ‘‘আমরা ১৩০ জনের একটি তালিকা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি।’’

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘এমন কোনও বিষয় রয়েছে বলে আমার জানা নেই। যদি সত্যি সত্যি এমন কোনও বিষয় থেকে, তা হলে পুলিশ-প্রশাসনকে জানাক।’’ তৃণমূলের খেতমজুর সংগঠনের কোচবিহার জেলা সভাপতি খোকন মিয়াঁ বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি সত্যি অভিযোগ হয়ে থাকে, তা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP Cooch Behar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy