প্রতীকী ছবি।
রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ। প্লেটলেটের চাহিদা বিপুল। এমতাবস্থায় একাধিক সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের কর্তারা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যভবন থেকে তাঁদের কাছে মৌখিক নির্দেশ এসেছে, প্লেটলেট দেওয়ার ক্ষেত্রে ডেঙ্গি রোগীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বাঁচার লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে রক্তের ক্যানসার রোগীদের, যার একটা বড় অংশই শিশু ও কিশোর।
অভিযোগ, সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে হত্যে দিয়ে থেকেও এখন প্লেটলেট পাচ্ছেন না রক্তের ক্যানসারের রোগীরা। কখনও-সখনও পেলেও তার জন্য প্রতিদিন ডোনর জোগাড় করতে হচ্ছে। আর বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশই মওকা বুঝে প্লেটলেটের ‘প্রসেসিং ফি’ বাবদ যা ইচ্ছে তাই দর হাঁকছে। ফলে রক্তের ক্যানসারের রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা কার্যত দিশেহারা।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের এফ-১ নম্বর শয্যায় সোমবার থম মেরে বসেছিল বছর তেরোর মেয়েটি। রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ার পর গত ২০ অগস্ট থেকে এই শয্যাই ক্লাস নাইনের ছাত্রী সায়নী গোস্বামীর ঘরবাড়ি। ধরা গলায় বলে, ‘‘আমার বাবা লোকের বাড়ি খবরের কাগজ দেন। প্রতি সপ্তাহে অনেক টাকা দিয়ে বাবাকে প্লেটলেট কিনতে হচ্ছে। কত বার বলেছি, কিনতে হবে না, মরে গেলে যাব! কিন্তু বাবা শুনছে না।’’ মেয়ের কথা শুনে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন শীলপাড়ার বাসিন্দা প্রাণগোবিন্দ গোস্বামী। বলেন, ‘‘এক দিন পর-পর, কখনও টানা এক সপ্তাহ ২-৪ ইউনিট প্লেটলেট লাগছে। নীলরতন, মানিকতলা— রিকুইজিশন জমা দিয়ে বসে থাকছি। ওরা সন্ধেবেলা ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। বলছে, আগে ডেঙ্গি রোগীদের দেবে।’’
উপায় না দেখে বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে কখনও ৮০০ টাকায় আবার কখনও ৬০০ টাকায় এক ইউনিট প্লেটলেট কিনছেন অনেকেই। কিন্তু কত দিন টানতে পারবেন জানেন না। নীলরতনে ভর্তি হুগলির হাউড়-এর বাসিন্দা সাত বছরের সুব্রতবাউল দাস, নদিয়ার কালিগঞ্জের কামরুলনাহার খাতুন, হুগলির কুন্তীঘাটের দু’বছরের অঙ্কুশ দাস— সকলের পরিবারেরই এক অবস্থা।
অঙ্কুশের বাবা অসীম দাস জানান, সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কগুলি ডোনর নিয়ে গেলেও বলছে এক-দু’দিন দেরি হবে। বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে ৫০০ টাকা এবং এক জন ডোনর নিয়ে গিয়ে এক ইউনিট প্লেটলেট পাচ্ছেন। কামরুল নাহারের এক আত্মীয় বললেন, ‘‘সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে ১৫ দিনের মধ্যে নিজে দু’বার রক্ত দিয়ে মেয়েটার জন্য প্লেটলেট নিয়েছি। জানি বেআইনি, কিন্তু এত ডোনর কোথায় পাব?’’
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘প্লেটলেটের অভাব নেই। ক্যানসার রোগীদেরও অসুবিধা হচ্ছে না।’’ সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ককে কোনও রকম মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি মানতে চাননি। কিন্তু নীলরতনের হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী কিন্তু বলছেন, ‘‘ব্লাড ক্যানসারের রোগীরা প্লেটলেট পেতে খুবই দুরবস্থায় পড়েছেন। দেখে ভীষণ খারাপ লাগছে।’’
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজির চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘প্লেটলেটের আকাল চলছে প্রায় মাস দু’য়েক। এই দীর্ঘ সময় ধরে রক্তের ক্যানসারের রোগীদেরও প্লেটলেট জোগাড়ের লড়াইটা চালাতে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, সব সরকারি হাসপাতালে ‘সিঙ্গল ডোনর প্লেটলেট’ সংগ্রহ ভাল ভাবে চালু করা গেলে প্লেটলেটের অভাব অনেকটা মেটানো যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy