E-Paper

নিত্যনতুন দায়িত্ব, ক্ষোভ বাড়ছে বিএলও-দের

চলতি ব‍্যবস্থায় অতিরিক্ত এই দায়িত্ব সম্পর্কে বিএলওদের অনেকের বক্তব্য, এই কারণেই তাঁদের প্রয়োজন ছিল একজন সহকারীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক দিকে ভোটার, আর এক দিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, উপরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই ত্রিমুখী চাপ সামলে অল্প সময়ে এসআইআরের কাজ করতে নাজেহাল হচ্ছেন বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) একটা বড় অংশ। কোনও ভুলভ্রান্তিতে তাঁদের উপর ঝুলছে শাস্তির খাঁড়াও। সম্প্রতি একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এক বিএলও কান্নায় ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই চাপ ঘাড়ে নিয়ে, সময়ের সঙ্গে লড়াই করে কাজ হবে তো নিখুঁত ভাবে! ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই বিএলও-দের একজোড়া নতুন দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন। তাতে সাধারণের সুবিধা হলেও, ঝক্কি বাড়বে বিএলও-দেরই। প্রসঙ্গত, এ দিন পর্যন্ত প্রায় ৯৫% (৭.২৭ কোটি প্রায়) ফর্ম বিলি হয়েছে। এ দিন পর্যন্ত সব জায়গায় বুথ লেভল এজেন্ট (বিএলএ) দিতে পারেনি কোনও রাজনৈতিক দলই।

চলতি এসআইআরে (ভোটের তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন) স্থির ছিল, বিএলও-র দেওয়া দু’টি ফর্মে ছবি সেঁটে দিতে হবে ভোটারকে। বৃহস্পতিবার কমিশন জানিয়েছে, ছবি দেওয়া ঐচ্ছিক। এ বার বিএলও-দের হাতে থাকা অ‍্যাপের মাধ্যমে তুলতে হবে ভোটারের ছবি। তা সরাসরি পৌঁছবে কমিশনের ডেটাবেসে। আবার ওই অ‍্যাপেই বিএলও-র জন্য তথ‍্য সংশোধনের (এডিট) সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাতে প্রথমবার গিয়ে হয়তো কোনও ভোটারকে পাননি বিএলও। সেই তথ্যই তিনি নথিবদ্ধ করেছেন অ‍্যাপে। পরে সেই ভোটার ফিরে যোগাযোগ করে ফর্ম ভরেছেন। তখন আগের তথ‍্য এডিট করে তা উল্লেখ করতে পারবেন বিএলও। কমিশনের ব‍্যাখ‍্যা, যে ভোটারেরা সরাসরি ফর্ম নিচ্ছেন বা জমা করছেন, তাঁদের ছবি বিএলও-অ‍্যাপে উঠবে। তবে যে ভোটারদের ফর্ম আত্মীয় ভরে জমা করবেন, সেই ফর্মে তাঁর ছবি সাঁটা থাকা প্রয়োজন।

চলতি ব‍্যবস্থায় অতিরিক্ত এই দায়িত্ব সম্পর্কে বিএলওদের অনেকের বক্তব্য, এই কারণেই তাঁদের প্রয়োজন ছিল একজন সহকারীর। তাতে ভুলের সম্ভাবনা প্রায় থাকতই না। যেখানে ১২০০-র বেশি ভোটার, সেখানে সহকারী বিএলও দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা পাওয়া যাচ্ছে না। হামেশাই কমিশনের বিধি বদলে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। অভিযোগ উঠছে, একেকটি বুথ এলাকায় অন্তত দেড় হাজার ভোটার থাকেন। বিধি এতবার বদল হলে (অ‍্যাপে ছবি তোলা) তো পুনরায় বাড়ি বাড়ি যেতে হবেয় ফলে তিনবারের বদলে আরও বেশিবার যাতায়াত করতে হবে। একার পক্ষে যা কঠিন। প্রসঙ্গত, কমিশন সম্প্রতি জানিয়েছে, মৃত, ভুয়ো, ভিন্ন ঠিকানায় একই নাম থাকা ভোটারদের তথ‍্য খসড়ায় ধরা পড়লে দায়বদ্ধ হতে হবেবিএলও-কেই।

পাণ্ডুয়ার এক বিএলও-র দাবি, “ফর্ম ফেরত নেওয়ার পরে অনলাইনে ডেটা এন্ট্রি করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ভোটারের লেখা বাংলাকে ইংরাজি করে আপলোড করতে সমস্যা হচ্ছে। বাংলা নামের বানান ইংরাজিতে কী হবে তা অনেক সময় বোঝা যাচ্ছে না। ডেটা এন্ট্রির জন্য আলাদা কর্মী নিয়োগ করল না কেন কমিশন? এত কম সময়ে এত ডেটা এন্ট্রি কি সম্ভব?” এক বিএলও বলেন, “আমাদের কি একটুও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হবে না?” অপর এক বিএলও-র কথায়, “ঠিকানা বদল এবং মৃত ভোটারের ক্ষেত্রে কমিশনের আগের নির্দেশ এখন পাল্টে গিয়েছে। ঘন ঘন নিয়ম বদলালে সমস্যা বাড়ছে।”

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় একটি বুথের বিএলও কেঁদে ফেলে জানান যে, তিনি এই কাজ করতে পারছেন না। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। এমন ভাবে চাপ দিলে আত্মহত্যা করার মতো পরিস্থিতি চলে আসছে। কমিশন সাম্প্রতিক ওই কর্মশালায় ভোটারের তথ্য বিএলও অ্যাপে আপলোড করার পদ্ধতি জানাচ্ছিল।

কমিশনের বক্তব্য— গত ন’দিনের মধ‍্যে বেশিরভাগ ফর্ম বিলি হয়েছে। এখন ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো সময় রয়েছে ফর্ম ফেরত নেওয়া এবং তথ‍্য নথিভুক্ত করার। বিধি পরিমার্জন হচ্ছে, কারণ তাতে তথ‍্যের বিকৃতি আটকানো যাবে। কমিশন চায় না, অন‍্য কারও ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের খেসারত দিতে হোক বিএলও-দের। তাই রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে। বাকি ব‍্যবস্থাপনার জন্য বিএলও সুপারভাইজ়ার এবং ইআরও-রা দায়িত্বপ্রাপ্ত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BLO Election Commission of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy