Advertisement
E-Paper

বাড়ছে সচেতনতা, মৃতদেহ যাচ্ছে ভিন রাজ্যেও

পুলিশের অনুমতি নিয়ে স্বাস্থ্যভবন মৃতদেহ পাঠায় অন্য রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। চিকিৎসা ও গবেষণার স্বার্থে।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ২০:০০

পুলিশের অনুমতি নিয়ে স্বাস্থ্যভবন মৃতদেহ পাঠায় অন্য রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। চিকিৎসা ও গবেষণার স্বার্থে।

মরণোত্তর দেহদান নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে এ রাজ্যে। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দান করা দেহের সংখ্যা বেড়েছে। তাতে রাজ্যের ডাক্তারি পড়ুয়াদের প্রয়োজন মিটিয়েও অন্য রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিকে সাহায্য করতে পারছে পশিচমবঙ্গ।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এখান থেকে অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর ও মেঘালয়ে মৃতদেহ পাঠাই। ওই সব দেহ যাঁরা নিয়ে যান, তাঁদের ৫০০ টাকা করে পথ-খরচও দেওয়া হয়।’’ স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, বছর পাঁচেক আগেও বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এখান থেকে দেহ যেত। তবে সেই প্রয়োজন এখন কমছে। পশ্চিমবঙ্গের দিকে না তাকিয়ে এখন তারা নিজের রাজ্য থেকেই মৃতদেহ জোগাড় করে নিচ্ছে। যেমন, কাটিহার মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, ‘‘আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মৃতদেহ আনা হত। তবে এখন বিহার থেকেই মৃতদেহ পেয়ে যাই।’’ অসমের শিলচর মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান বিজন দত্তেরও বক্তব্য, ‘‘কলকাতা থেকে অসমে দেহ আনা হয় ঠিকই। কিন্তু শিলচরের তা দরকার হয় না।’’

চিকিৎসাশাস্ত্রে মৃতদেহের অবদান আকাশছোঁয়া। হাতে-কলমে দেহতত্ত্ব শিখতে ডাক্তারি পড়ুয়াদের মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করতেই হয়। তাই বছরভর মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মৃতদেহের চাহিদা থাকে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মৃতদেহের সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন অ্যানাটমি বিভাগে। পড়ুয়াদের মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করতে হয়।’’ ওই স্বাস্থ্যকর্তা জানান, রাজ্যে মেডিক্যাল পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে। মৃতদেহের প্রয়োজনও বেড়েছে। কিন্তু মরণোত্তর দেহদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় মৃতদেহ পেতে অসুবিধা হচ্ছে না।

তবে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকে। ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান রীতা রায় বলেন, ‘‘বছরে আমাদের ১০টির মতো দেহ দরকার হয়। গত বছরও কলকাতা থেকে মৃতদেহ আনতে হয়েছে। এ বার অবশ্য আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ তিনটে দেহ দিয়েছে। আরও প্রয়োজন হলে পশ্চিমঙ্গের কাছে চাইব।’’ রাঁচির রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স-এর এক প্রফেসর চিকিৎসক জানান, মৃতদেহ পেতে পশ্চিমবঙ্গই তাঁদের বড় ভরসা।

এই ভরসার ভিতটা অবশ্য এক দিনে তৈরি হয়নি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে দেহদান করানোর ক্ষেত্রে গোটা দেশের নজর কেড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তাই নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়েও দেহ পাঠানো যাচ্ছে ভিন রাজ্যে। এ রাজ্যে দেহদান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা, সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ব্রজ রায়ও বলেন, ‘‘এটা মানুষের সচেতনতার সুফল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এক সময় ধারণা ছিল, বয়স্ক মানুষেরাই দেহদান করেন। কিন্তু সেই ধারণা ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। এখন যুবক-যুবতীদের মধ্যেও দেহদানের প্রবণতা বাড়ছে।’’ একই কথা শুনিয়েছেন একাধিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষও। এনআরএসের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘আগে কেবল কলকাতাতেই দেহদানের অঙ্গীকার সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন জেলাগুলিতেও এই প্রবণতা বাড়ছে। এমনকী, সদ্য বিবাহিত যুবক-যুবতীরাও দেহদানের অঙ্গীকার করছেন।’’ ব্রজবাবু জানান, এখন প্রায় ১০ লক্ষ অঙ্গীকারপত্র জমা রয়েছে তাঁদের কাছে।

body dead body for research dead body death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy