দুপুরে তিনি খেতে আসতেন বাড়িতে। কিন্তু শনিবার দুপুর গড়িয়ে গেলেও না আসায় খুঁজতে বেরিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। আঁতিপাতি করে খুঁজেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। শেষে পরিবারের লোকেরা বিষয়টি পুলিশে জানান। রবিবার ভোরে এলাকার একটি নির্মীয়মাণ কারখানার সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হল ওই ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যমগ্রাম থানার দিগবেড়িয়ায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুধীর দাস (৬৪)। মধ্যমগ্রাম নতুন পল্লির বাসিন্দা সুধীরবাবু পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, প্রথমে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে ও তার পরে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের জন্য দেহটি বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
তবে এই ঘটনায় কারা জড়িত বা কী কারণে এই খুন, তা এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে। এক অফিসার বলেন, ‘‘খুনের পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত আক্রোশে এই ঘটনা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। রবিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিগবেড়িয়ায় একটি ইন্ডাস্ট্রি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন সুধীরবাবু। ওই ক্যাম্পাসে ছোট-বড় অনেকগুলি কারখানা আছে। সুধীরবাবু ডিউটি করতেন মূল গেটে। তাঁর পরিজনেরা জানিয়েছেন, রোজ সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যেতেন তিনি। শনিবার সকালেও সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন। দুপুরে বাড়িতে খেতে আসার কথা ছিল। কিন্তু ২টো বেজে গেলেও সুধীরবাবু না আসায় বাড়ির লোকেরা প্রথমে ওই কারখানায় যান। কিন্তু সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন এলাকায় খুঁজেও সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের তরফে থানায় বিষয়টি জানানো হয়।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রবিবার ভোরে কারখানার কয়েক জন কর্মীর নজরে আসে, ব্যাটারি তৈরির একটি নির্মীয়মাণ কারখানার সেপটিক ট্যাঙ্কের মুখ সিমেন্ট দিয়ে আটকানো। সিমেন্টের আস্তরণটি কাঁচা অবস্থায় ছিল। কর্মীদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে সিমেন্টের আস্তরণটি ভাঙতেই ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে সুধীরবাবুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে তাঁর সাইকেল ও ব্যাগটি পাওয়া গিয়েছে।
ওই ব্যক্তির বাড়ির লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি সুধীরবাবু বাড়ি তৈরি করছিলেন। মাসখানেক আগে বাড়ি তৈরির জায়গা ছাড়া নিয়ে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে তাঁর বিবাদ বেধেছিল। তার জেরে এই ঘটনা কি না, তা দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গামছা দিয়ে মুখ ঢাকা এক জনকে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। মধ্যমগ্রামের পুর প্রধান তথা স্থানীয় বিধায়ক রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘কারা, কেন সুধীরবাবুকে খুন করল পরিষ্কার নয়। পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে।’’
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পরিবারের তরফে নির্দিষ্ট ভাবে কারও নামে অভিযোগ করা হয় নি। খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত
শুরু হয়েছে।