Advertisement
E-Paper

নানা হাসপাতালে ঠোক্কর খেয়ে খোয়া গেল ডান হাতটাই

গোটা ঘটনায় সমন্বয়ের অভাব অস্বীকার করছেন না স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) প্রদীপ মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারের অভাব আছে। সব জায়গায় সব সময় সব ধরনের অস্ত্রোপচারে সমস্যা হতে পারে। তবে রোগীর অবস্থা বুঝে হাসপাতালগুলির মধ্যে যোগাযোগের তাগিদ বাড়লে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।’’

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫০
হাসপাতালে তাজমুল।

হাসপাতালে তাজমুল।

বোলপুরে দুর্ঘটনা ঘটে দিন পাঁচেক আগে এক সন্ধ্যায়। তার পরে আহত যুবকের বর্ধমান থেকে কলকাতার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরপাক। এসএসকেএম, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ঠাঁই না-পেয়ে যেতে হয় মহানগরীর বেসরকারি হাসপাতালে। তবু গ্রামের দিনমজুর যুবকের রুটিরুজির একমাত্র অবলম্বন ডান হাতটিকে রক্ষা করা গেল না।

পচন ধরা হাতটি মঙ্গলবার বিকেলে উল্টোডাঙার এক বেসরকারি হাসপাতালে কেটে বাদ দিতে হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্যে আপৎকালীন চিকিৎসায় সঙ্কটের চেহারাটা ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। মফস্‌সল-জেলা সদরে পরিকাঠামোর দৈন্যের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাবও প্রকট। শ্রীনিকেতন মোড়ে ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ট্রাকের ধাক্কায় লোহাগড় গ্রামের কলমিস্ত্রি শেখ তাজমুলের হাতে গুরুতর আঘাত লাগে। রাতে এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসার পরে শনিবার সকালে ‘শয্যা নেই’ বলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ক্ষতিগ্রস্ত ধমনীতে জরুরি ভিত্তিতে ভাস্কুলার সার্জারির দরকার ছিল তাজমুলের। বোলপুরের মহকুমা হাসপাতাল হয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে ওই অস্ত্রোপচার করার পরিস্থিতি ছিল না। রাতেই এসএসকেএমে ইমার্জেন্সিতে অস্থিরোগ বিশারদ, প্লাস্টিক সার্জন তাঁকে দেখেন। ধমনীতে গুরুতর চোট, হাড় ভাঙার কথা এসএসকেএম ও বর্ধমানের হাসপাতালের টিকিটে লেখা আছে। তবু শয্যার অভাবের কথা বলে যুবককে ফিরিয়ে দেয় হাসপাতাল।

কেন? গোটা ঘটনায় সমন্বয়ের অভাব অস্বীকার করছেন না স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) প্রদীপ মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারের অভাব আছে। সব জায়গায় সব সময় সব ধরনের অস্ত্রোপচারে সমস্যা হতে পারে। তবে রোগীর অবস্থা বুঝে হাসপাতালগুলির মধ্যে যোগাযোগের তাগিদ বাড়লে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।’’ অর্থাৎ বর্ধমান থেকে আহতকে কলকাতায় পাঠানোর সময়েই তাঁর অবস্থা এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে জানালে সুবিধা হত। এসএসকেএমেও সর্বোচ্চ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার ছিল। এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কেন রাতে অস্ত্রোপচার করা যায়নি বা রোগীকে কেন রাখা গেল না, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

চিকিৎসকদের বক্তব্য, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতের ক্ষেত্রে প্রথম ছ’ঘণ্টা হল ‘গোল্ডেন আওয়ার’। এ ক্ষেত্রে এসএসকেএমে রোগীকে সেই সময়ের একটু পরে আনা হলেও তখনই অস্ত্রোপচার করা গেলে হাতটা বাঁচতে পারত। বর্ধমান মেডিক্যালে ‘ট্রমা সেন্টার’ আছে। কিন্তু পরিকাঠামো বেহাল। সেখানকার সুপার উৎপল দাঁ জানান, কার্ডিওথোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জারি ইউনিটে এক জন চিকিৎসক আছেন। শুক্রবার রাতে তিনিও ছিলেন না। আপৎকালীন চিকিৎসার স্নায়ুরোগ ও স্নায়ুশল্যবিশারদেরও অভাব আছে।

আহতের দাদা শেখ মুনতাজ জানান, বালিগঞ্জের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েও লাভ হয়নি। কেননা খরচ সামলানোর টাকা ছিল না। বীরভূমের প্রবীণ চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তাঁর জামাই অঞ্জন চট্টরাজ রোগীর দেখভাল করেন। রেলের চিকিৎসক অঞ্জনবাবু ডাক্তারদের একটি সমবায়ের অধীনে উল্টোডাঙার ছোট হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নেন। অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘পচন ধরছিল। ছেলেটার ডান হাতটা কনুইয়ের কাছ থেকে বাদই দিতে হল।’’ তাজমুলের দাদার কথায়, ‘‘গরিবের ঘরে হাত ছাড়া ভাই কী করবে, মাথায় ঢুকছে না!’’

Road Accident Bolpur Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy