Advertisement
০৪ মে ২০২৪
তোলাবাজির নালিশে রোষ

যুবককে পিষে রেলিং ভেঙে নীচে পড়ল ট্রাক

আপাতদৃষ্টিতে নিছক একটি দুর্ঘটনা। ট্রাকের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যু। পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতু থেকে ট্রাকের খালে পড়ে যাওয়া। কিন্তু, সোমবার সেই ঘটনাকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ হল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া খড়িকাশুলি এলাকা।

উন্মত্ত জনতা। ইট-বৃষ্টি থামাতে শূন্যে গুলি পুলিশের। বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

উন্মত্ত জনতা। ইট-বৃষ্টি থামাতে শূন্যে গুলি পুলিশের। বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০৪:৩০
Share: Save:

আপাতদৃষ্টিতে নিছক একটি দুর্ঘটনা। ট্রাকের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যু। পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতু থেকে ট্রাকের খালে পড়ে যাওয়া।

কিন্তু, সোমবার সেই ঘটনাকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ হল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া খড়িকাশুলি এলাকা। যার নেপথ্যে রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ। তোলা এড়াতে এ দিন ট্রাকটি গতি বাড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, অভিযোগে জনরোষ আছড়ে পড়ল পুলিশের উপরে। পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে ইট, পাথর ছোড়া হল। ভাঙচুর হল পুলিশের গাড়িও। শূন্যে গুলি ছুড়ে, লাঠি চালিয়ে করে পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এই দুর্ঘটনা উস্কে দিয়েছে গত জানুয়ারিতে বীরভূমের ময়ুরেশ্বরের একটি ঘটনা। সেখানেও পুলিশের তোলা এড়াতে ট্রাক এক ব্যক্তিকে পিষে দেয়। তার পরে এলাকাবাসী খেপে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগায়। থানাতেও ভাঙচুর চালানো। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশকর্মীরা থানা ছেড়ে পালিয়েছিলেন।

এ দিন দুপুরে গড়বেতা হয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বিষ্ণুপুরের দিকে আসছিল একটি খালি ট্রাক। খড়িকাশুলি গ্রামের কাছে কংসাবতী সেচখালের উপর সেতুতে উঠে ট্রাকটি উল্টো দিক থেকে আসা মোটরবাইকে ধাক্কা মেরে তাকে নিয়ে রেলিং ভেঙে নীচে আছড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মোটরবাইক আরোহী পিন্টু বারিক (২৬)। তিনি স্থানীয় তিন নম্বর ক্যাম্পে মামার বাড়িতে থাকতেন। এক মাস আঘেই তাঁর বিয়ে হয়েছিল। এ দিন তিনি বাজার করে মামাবাড়ি ফিরছিলেন। পরে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে মারা যান ট্রাকচালক জয়প্রকাশ পান্ডে (৪০)। বীরভূমের দুবরাজপুরে তাঁর বাড়ি। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি আহত খালাসি।

জেলায় জেলায় ইট-পাথর-বালি বোঝাই ট্রাক থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে নতুন নয়। খড়িকাশুলির বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, ওই সেতুর কাছে টহলদার পুলিশ ভ্যান গাড়ি থেকে তোলা আদায় করে। তা এড়াতে গিয়েই ট্রাকটি গতি বাড়িয়ে বেসামাল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন জড়ো হয়ে জাতীয় সড়কের উপরে অবরোধ শুরু করেন। টহলদার পুলিশকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। জনা ছয়েক পুলিশকর্মী গাড়ি ছেড়ে পিছু হটতেই জনতা পুলিশের ভ্যান ঠেলে রাস্তার পাশে ফেলে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে আরও কিছু পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও বিবেক বর্মাও। তিনি বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি।

শেষে পুলিশকর্মীরা লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে জনতাকে। অভিযোগ, সেই সময় লাঠির ঘায়ে কয়েক জন গ্রামবাসী আহত হন। তাদের মধ্যে এক কিশোরীকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হয়। এতে জনতা আরও খেপে উঠে পুলিশকর্মীদের উপর ইট-বৃষ্টি শুরু করে। এক পুলিশকর্মী বন্দুক থেকে চার বার শূন্যে গুলি ছোড়েন। জনতা গ্রামের ভিতরে সরে গিয়ে ইট ছুড়তে থাকে। কয়েকজন পুলিশকর্মী কোমরে গোঁজা সার্ভিস রিভলভার উঁচিয়ে ভয় দেখান। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে পুলিশ মোটরবাইকের চালক, ট্রাক চালক আর খালাসিকে সেচখাল থেকে উদ্ধার করে। ততক্ষণে আরও বাহিনী এসে এলাকা ঘিরে ফেলে। গ্রামে গ্রামে টহলও শুরু হয়।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় গাড়ি থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ মানতে চাননি। শূন্যে
গুলি ছোড়ার ঘটনাও জানা নেই বলে তাঁর দাবি। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় পুলিশ মালবাহী গাড়ি থামিয়ে তোলা আদায় করে। আগে রাতে হত, এখন দিনেও দেদার তোলা আদায় চলছে। দুর্ঘটনায় মৃত পিন্টুর স্ত্রী দীপা কিংবা পরিজনেরা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Truck boy Lynched
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE