Advertisement
E-Paper

পুলিশকে ৩০ লাখ দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করতে গিয়েই জালে পড়ল তাপস

পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দিতে তৈরি ছিল তাপস। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে জাল বিছিয়ে ইঁদুরকে গর্ত থেকে টেনে বের করলেন তদন্তকারীরা।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
আদালত চত্বরে তাপস মল্লিক। শুক্রবার। ছবি: দিলীপ নস্কর।

আদালত চত্বরে তাপস মল্লিক। শুক্রবার। ছবি: দিলীপ নস্কর।

পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দিতে তৈরি ছিল তাপস। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে জাল বিছিয়ে ইঁদুরকে গর্ত থেকে টেনে বের করলেন তদন্তকারীরা। পুলিশের সঙ্গে ‘ডিল’ চূড়়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার বেশি রাতে দত্তপুকুরের গোপন ডেরা থেকে বাইরে আসার পরেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আইটিআই ছাত্র কৌশিক পুরকাইত খুনে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিক। একই সঙ্গে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে তার এক সাগরেদও।

শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে বিচারক ডায়মন্ড হারবারের হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তাপস ও তার সঙ্গী বিল্লু ঘোড়ুইকে ১৩ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তার হয়ে এ দিন আদালতে সওয়াল করেননি কোনও আইনজীবী। ডায়মন্ড হারবার আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দোষীর শাস্তি হওয়া দরকার। এই আদালতের আইনজীবীরা কোনও ভাবেই ওঁর হয়ে মামলা লড়বেন না।’’ নবান্ন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খুনের মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।

কী ভাবে তাপসের নাগাল পেলেন তদন্তকারীরা?

সোমবার, ঘটনার রাতে গুরুতর জখম কৌশিককে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সেখানে হাজির ছিল তাপসও। পরে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রাতেই গা-ঢাকা দেয় সে। মোবাইল ফোনের স্যুইচও অফ করে দেয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, কৌশিকের পরিজনদের তরফে প্রথমে যে এফআইআর করা হয়েছিল, সেখানে নিদিষ্ট কারও নাম ছিল না। পরে নিহত ছাত্রের মা চন্দ্রাদেবী তাপসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই তাপসের খোঁজে হন্যে হয়ে নামে পুলিশ।

কিন্তু তাপস তখন অধরা। এ দিকে এলাকায় জনরোষ বাড়ছে। চাপ বাড়ছে পুলিশের উপরেও। এই অবস্থায় তাপসের নাগাল পেতে তার ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের মোবাইলে আড়ি পাতে পুলিশ। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছিল না। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘খুবই ধূর্ত লোক। ফোন ট্যাপ হতে পারে মনে করেই সম্ভবত কাছের কোনও লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল না।’’ জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশের আরও অনুমান, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কারও কারও মাধ্যমে পুলিশের গতিবিধি সম্পর্কেও খবর পেয়ে যাচ্ছিল এই তৃণমূল নেতা।

কিন্তু হাল ছাড়েনি পুলিশও।

বুধবার রাতে তাপস-ঘনিষ্ঠ ডায়মন্ড হারবারের এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে তাপসের নতুন মোবাইল নম্বর মেলে। ওই নতুন নম্বরটি থেকেই তাপস কয়েক বার যোগাযোগ করেছিল ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর এলাকার।

কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এই সময়ে মোক্ষম চালটি চালে পুলিশ।

কী সেই চাল?

এক তদন্তকারী জানান, প্রাথমিক ভাবে এফআইআরে নিজের নাম না থাকায় তাপস ভেবেছিল, পুলিশকে টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে নেবে। সেই কাজে বিশ্বাসভাজন ওই ব্যবসায়ীর সাহায্য নিতেই হয়েছিল তাপসকে। তাপস তাকে বলেছিল, যত টাকা লাগে, পুলিশকে দিতে সে তৈরি। ওই ব্যবসায়ী মারফতই পুলিশ পাল্টা প্রস্তাব পাঠায় তাপসের কাছে। বলা হয়, ৩০ লক্ষ টাকা দিলে থানা-পুলিশের দিকটা সামলে নেওয়া যাবে। কিন্তু এক অফিসারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে তাপসকে। ওই অফিসারই জানিয়ে দেবেন, কবে কোথায় টাকার লেনদেন হবে। টাকা পাওয়ার পরে বাংলাদেশ সীমান্তে পুলিশ পৌঁছে দেবে তাকে।

ইতিমধ্যে থানার সিভিক ভলান্টিয়ার এবং কিছু পুলিশ কর্মীর মধ্যে সুকৌশলে রটিয়ে দেওয়া হয়, টাকা দিয়ে মামলা রফা করার চেষ্টা চলছে। সেই খবর বিশ্বস্ত সোর্সে ঠিক মতো পৌঁছেও যায় তাপসের কাছে। দু’দিক থেকে একই বার্তা আসতে থাকায় সন্দেহের আর কোনও অবকাশ ছিল না তাপসের। সেই মতো ওই ব্যবসায়ী-বন্ধু মারফত টাকা দিয়ে ‘রফা’ করার জন্য পুলিশকে দত্তপুকুরে ডেকে পাঠায় সে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টা নাগাদ দত্তপুকুর থানার বামনগাছি এলাকার যশোর রোডে হাজির হয় তাপস ও বিল্লু। সেখানেই সে জালে পড়ে যায়। আপাতত তার ঠাঁই থানার লকআপে।

tapas mallick
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy