অবশেষে বাড়ি ফিরছেন পাক সেনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলার বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউ। শুক্রবার সকাল থেকে রিষড়ার ‘সাউ সদন’-এ তাই উৎসবের মেজাজ। খুশির মেজাজে স্ত্রী রজনী থেকে একমাত্র পুত্র। বাড়ির সকলেই অপেক্ষা করছেন পূর্ণমের। বিএসএফ জওয়ান ঘরে পা দিলেই কেক কেটে উদ্যাপন হবে। সে জন্য সকালেই কেক আনা হয়েছে। থাকছে, পূর্ণমের প্রিয় লুচি-তরকারি। সঙ্গে দই-মিষ্টি। সে জন্য রাঁধুনিও ডাকা হয়েছে। পূর্ণমের স্ত্রী রজনী বলেন, ‘‘আজ (শুক্রবার) নিরামিষ রান্না হবে। রবিবার মাংস রান্না করব।’’
গত ২৩ এপ্রিল (পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পরদিন) পঞ্জাবের পঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় ভুল করে পাকিস্তানে ঢুকে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন পূর্ণম। তখনই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে ধরে। সীমান্তে এমন ঘটলে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু পূর্ণমকে তখন ছাড়েনি পাকিস্তান। বিএসএফের পক্ষ থেকে পূর্ণমের পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়, যে কোন মূল্যে জওয়ানকে দেশে ফেরানো হবে। কিন্তু কয়েক দিন কেটে যাওয়ার পরেও স্বামীর মুক্তির খবর না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পঠানকোট চলে গিয়েছিলেন রজনী। সরকার এবং বাহিনীর আশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ঘটনাক্রমে ২০ দিন বন্দি থাকার পর গত বুধবার দেশের মাটিতে ভারতে ফেরেন বিএসএফ কনস্টেবল পূর্ণম। অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরেন তিনি। ভিডিয়ো কলে কথা হয় স্ত্রীর সঙ্গে। কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলেও তখনই বাড়ি ফেরার অনুমতি পাননি পূর্ণম। তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। বেশ কিছু সরকারি কাজকর্ম ছিল। অবশেষে বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র পেয়েছেন বিএসএফ জওয়ান।
আরও পড়ুন:
শুক্রবার সকাল থেকে সাজ সাজ রব রিষড়ার ‘সাউ সদন’-এ। পূর্ণমের বাড়িতে বাসনকোসন, হাতা-খুন্তি নিয়ে হাজির হয়েছেন রাঁধুনি। সাজানো হচ্ছে বাড়ি। তার জন্য গেরুয়া, সাদা এবং সবুজ রঙের এলএইডি টুনি নিয়ে এসেছেন এক ইলেকট্রিশিয়ান। দুর্গাপুর, আসানসোল থেকে রিষড়ায় আসছেন পূর্ণমের আত্মীয়-স্বজনেরা। ভূরিভোজের আয়োজন হচ্ছে বাড়িতে। খুশির হাওয়া গোটা পাড়ায়। পূর্ণমের স্ত্রী বলেন, ‘‘এত দিন পরে ও বাড়ি ফিরবে, খুব ভাল লাগছে। কিন্তু ওর কাছে ফোন না থাকায় কথা বলতে পারিনি। ঠিক কখন ফিরছে, জানি না। দশ দিন আগে আমরা জেনে গিয়েছিলাম ভারতে ফিরেছে। আজ বাড়ি ফিরলে ওর প্রিয় লুচি-তরকারি, দই-মিষ্টির আয়োজন হবে। কেক কাটা হবে। আজ একাদশী তাই কোন আমিষ রান্না হবে না বাড়িতে। মাংস হবে রবিবার।’’