E-Paper

‘কৃ্ষ্ণ’ অ্যাটর্নি জেনারেলকে সংবর্ধনা বোসের

সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যপালের অবস্থান জানতে চাওয়ার পরেই অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বোচ্চ আদালতকে তাঁর কলকাতা যাত্রার কথা জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:২২
CV Ananda Bose.

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। — ফাইল চিত্র।

উপাচার্য-জট নিয়ে আলোচনায় কলকাতায় বসে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাজ্যপাল নিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের কথা শুনলেন কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বৈঠকটিতেই কার্যত রাজ্যপালের হাতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সংবর্ধনার আসর বসে। অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের ওই বৈঠকেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘গভর্নরস অ্যাওয়ার্ড অব এক্সেলেন্স’ দেন। এক লক্ষ টাকার পুরস্কার দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘সখা কৃষ্ণের’ মতো বরণ করে রাজ্যপাল বলেছেন, “প্রভু কৃষ্ণ যেমন কোনও পক্ষকে দুঃখিত না-করে সমস্যার সমাধান করেন, আপনিও সেই ভাবেই সব কিছুর নিষ্পত্তি করবেন। আপনি তো এখানে বেড়াতে আসেননি। অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে আপনাকে পাঠানো হয়েছে।” এ দিনের বৈঠকে অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেলের তরফে কোনও সমাধান-সূত্র মেলেনি।

সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যপালের অবস্থান জানতে চাওয়ার পরেই অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বোচ্চ আদালতকে তাঁর কলকাতা যাত্রার কথা জানান। দু’সপ্তাহ বাদে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এ দিনের বৈঠকে ভবিষ্যতের দিশা স্পষ্ট না-হলেও রাজ্যপাল কেরলের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ মনে করিয়ে দেন। বলেন, “কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আচার্যই সব। আমি অবশ্যই সহযোগিতা করব।” তবে বোস এ দিনও মনে করিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও সংঘাত নেই। এ দিন দুপুরেই রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত ও উপাচার্য-জট প্রসঙ্গে জিপিও-র একটি অনুষ্ঠানের পরে রাজ্যপাল বলেছিলেন, “যা ঘটে গিয়েছে, তা সবই অতীত। সমস্ত মতানৈক্য সরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে একযোগে কাজ করা হবে। বাংলা নতুন ভোর দেখবে।” কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল এ শহরে আসার পরে ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজভবনে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠকে রবীন্দ্রভারতী এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের নানা অসহযোগিতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “চূড়ান্ত অসহযোগিতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। ঘেরাও হতে হচ্ছে। এমনকি আমাদের বাড়িতেও আক্রমণ করা হচ্ছে। কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় উঠে যাওয়ার অবস্থা।” রাজ্যপাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কখনওই কনফ্লিক্ট জ়োন (সংঘাত ক্ষেত্র) হওয়া উচিত নয়। কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা। মনে রাখতে হবে পড়ুয়াদের স্বার্থেই সব থেকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। উপাচার্যেরা বাস্তব পরিস্থিতি বলেছেন। সমস্যা থাকলে সমাধান থাকে।”

এ দিনের বৈঠক নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং তৃণমূলের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওয়েবকুপার যুগ্ম সম্পাদক মনোজিৎ মণ্ডল বলেন, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শতকের শুরুতে কার্জনপুজো হত। আজ শুনলাম অ্যাটর্নি জেনারেলের পুজো হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ সাংবিধানিক। তিনিই উপাচার্য মামলায় সরকারি উকিল। তাই পুরস্কার দেওয়া পক্ষপাতদুষ্ট। মনোজিৎ বলেন, “রাজ্য-রাজ্যপাল মামলায় উনি নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন তো?”

বৈঠকে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়। তিনি পরে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পঠনপাঠন, প্রশাসনিক এবং পড়ুয়া সংক্রান্ত যে চরম সমস্যা ও অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার আশু সমাধানের কোনও দিশা মেলেনি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CV Ananda Bose West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy