অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় চাকরি চলে গিয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবার পরীক্ষায় বসতে হবে তাঁকে। কিন্তু এই অবস্থায় পরীক্ষা দেবেন কী ভাবে? প্রশ্ন তুলে এসএসসির বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ চাকরিহারা শিক্ষিকা। আদালতের কাছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই শিক্ষকের আবেদন, তাঁর জন্য পরীক্ষার নিয়ম শিথিল করা হোক। অথবা, বিকল্প কোনও পথ বলে দিক আদালত। এ ছাড়া এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তির আরও কয়েকটি অংশে আপত্তি জানিয়ে হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। ওই শিক্ষিকার আবেদন হাই কোর্ট গ্রহণ করেছে। চলতি সপ্তাহে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে মামলার শুনানির সম্ভাবনা।
২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বিবেকানন্দ পল্লির স্মিতা দাস (নাম পরিবর্তিত)। পরীক্ষায় পাশ করে তিনি চাকরি পান। ২০১৮ সাল থেকে রহড়ার একটি স্কুলে পড়াতেন স্মিতা। ওই শিক্ষিকা জানান, তিনি যোগ্য। যোগ্যতা প্রমাণ করেই তিনি চাকরি পেয়েছিলেন। গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। চাকরি হারান স্মিতা। আবার সেই সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বাও। ওই অবস্থায় চাকরি যাওয়ার খবরে ভেঙে পড়েন তিনি। চাকরি ফিরে পাবেন কি না, তাঁর জানা নেই। গত ৩১ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এসএসসি। সোমবার থেকে অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। আবেদনের শেষ তারিখ জুলাই মাসের ১৪ তারিখ। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা নেবে এসএসসি। আদালতে স্মিতার বক্তব্য, ‘‘সাত-আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এক জন মহিলা কী ভাবে পরীক্ষা দেবেন? তাঁর পক্ষে কি স্বাভাবিক ভাবে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব?’’
তাঁর আইনজীবী শুভ্রপ্রকাশ লাহিড়ির কথায়, ‘‘প্রত্যেক মানুষের জীবন নিয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের আগে অন্তঃসত্ত্বা হন আমার মক্কেল। তিনি তো জানতেন না ভবিষ্যতে কী হবে? তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে, কারও চাকরি থাকবে না! চলতি বছরই আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর সাংসারিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুয়ায়ী এখন দেখা যাচ্ছে, তাঁকে পরীক্ষায় বসতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে এই সব প্রার্থীর জন্য কোনও সুরাহা নেই। তাই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয়েছে।’’ আইনজীবী জানান, এই সব প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে সুযোগ শিথিল করতে হাই কোর্টের কাছে আর্জি জানাবেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পাশাপাশি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে ন্যূনতম নম্বর নিয়েও আপত্তি জানান ওই শিক্ষিকা। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনেক পার্থক্য রয়েছে। অথচ কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ২০১৬ সালের অনুরূপ নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে হবে। মামলাকারীদের দাবি, ২০১৬ সালে বলা হয়েছিল, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে ন্যূনতম নম্বর ৫০ এবং ৪৫ শতাংশ থাকতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীদের ৪০ শতাংশ নম্বর থাকলেই চলত। কিন্তু এখন ওই দুই স্তরে ন্যূনতম নম্বর ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বঞ্চিত হবেন অনেক সংরক্ষিত শিক্ষক এবং প্রার্থী।