হাই কোর্টের এজলাসে দাঁড়িয়ে বছর পঁচিশের এক তরুণী। আইনজীবী নেই, বরং নিজেই সওয়াল করছেন তিনি। কোনও অপরাধ করেননি তবুও নিজেকে ‘রক্ষা’ করতে ন্যায়ালয়ের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর আর্জি, পরিবারের পছন্দ করে দেওয়া পাত্রকে বিয়ে করতে চান না। পড়াশোনা করে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চান। পুলিশ তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে পরিবারের ‘সম্মানরক্ষায়’ প্রাণ হারাতে হতে পারে, সে কথাও কোর্টের সামনে বলেছেন তিনি।
সিনেমা-ওয়েব সিরিজ় এমন দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু পুজোর ছুটির মধ্যে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী রইল কলকাতা হাই কোর্ট। আদতে ঝাড়খণ্ডের ডালটনগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণীর আর্জি গ্রহণ করেছে হাই কোর্ট। বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল জানিয়েছেন, আগামী ১০ নভেম্বর হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। আদালতের খবর, তত দিন ওই তরুণীকে জোর করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না ঝাড়খণ্ডের পুলিশ। আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, সাবালিকা হলেও এখনও এ দেশে যে সব মেয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারে না, সে কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ওই তরুণী।
কোর্টের খবর, পরিবারের সঙ্গে ওই তরুণী ডালটনগঞ্জে থাকতেন। নিজে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলেও পরিবারের সায় মেলেনি। উপরন্তু এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু সেই পাত্রকে তরুণীর পছন্দ নয়। এই কারণেই পরিবারের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য শুরু হয় এবং মতপার্থক্য এমনই গোলমালের চেহারা নেয় যে মার্চ মাসে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন ওই তরুণী। ডালটনগঞ্জ থেকে ট্রেনে চেপে ওই তরুণী চলে আসেন এ রাজ্যে। হাওড়ায় নেমে খিদিরপুরে একটি ভাড়া বাড়ি জোগাড় করেন এবং সেখানেই থাকতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে মেয়েকে বাড়ি ফেরাতে তাঁর পরিবার ঝাড়খণ্ড পুলিশের দ্বারস্থ হয়। ডালটনগঞ্জ থানায় অভিযোগের পাশাপাশি তরুণীর পরিবার ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টে মেয়ের সন্ধান পেতে (হেবিয়াস কর্পাস) মামলাও করে বলে খবর। পরিবারের গতিবিধির খবর পেয়ে ওই তরুণী ডালটনগঞ্জ থানায় চিঠি লিখে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান। অভিযোগ, তারপরেও ডালটনগঞ্জ থানার পুলিশ তরুণীর সন্ধানে খিদিরপুরে আসে। পুলিশের নাগাল এড়াতে খিদিরপুর থেকে ঠাঁই বদল করে তিলজলায় চলে যান তরুণী। কিন্তু ঝাড়খণ্ড পুলিশ সেখানেও পৌঁছে যায়। এরপরেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই তরুণী।
হাই কোর্টে ওই তরুণী আর্জি জানান, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষা করুক আদালত। বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল ওই তরুণীর বক্তব্য নথিবদ্ধ করেন। রাজ্যের আইনজীবী পুলিশের রিপোর্ট জমা দিয়ে জানান যে ঝাড়খণ্ডের ডালটনগঞ্জ থানায় একটি মামলার তদন্তের স্বার্থে মামলাকারী ওই তরুণীর বয়ান নথিবদ্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে। তারপরেই বিষয়টি ছুটির পরে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)