জনস্বার্থ মামলা আর শুনবেন না কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। আদালত প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের পর থেকে দায়ের হওয়া কোনও জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে না এই প্রধান বিচারপতির এজলাসে! নতুন করে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলাও শুনবেন না তিনি। তার পরিবর্তে কোন বিচারপতির এজলাসে এই সব জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে, তা-ও জানানো হয়েছে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, কলকাতা হাই কোর্টের ইতিহাসে এমন ঘটনা বেনজির!
হাই কোর্ট সূত্রে খবর, প্রধান বিচারপতির এজলাসে জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে না, এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। কোন মামলার শুনানি কোন বিচারপতির বেঞ্চে হবে, তা ঠিক করে থাকেন প্রধান বিচারপতিই। মামলার এবং বিচারপতিদের ‘রস্টার’ ঠিক করার দায়িত্ব তাঁরই। এ বার জনস্বার্থ মামলার শুনানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিলেন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। ওই সব জনস্বার্থ মামলার শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে।
হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ মতে, জনস্বার্থ মামলার শুনানি সাধারণত প্রধান বিচারপতির এজলাসেই হয়। যদি প্রধান বিচারপতি না থাকেন, তখনই অন্য বিচারপতিদের এজলাসে শুনানি হয়ে থাকে। তবে এ বার থেকে প্রধান বিচারপতি আর জনস্বার্থ মামলা শুনবেন না। এমন উদাহরণ কলকাতা হাই কোর্টে ইতিহাসে খুব কম। তবে জনস্বার্থ মামলা যে প্রধান বিচারপতিকেই শুনতে হবে, তার কোনও নিয়ম নেই। তবে কলকাতা হাই কোর্টের ঐতিহ্য অনুযায়ী এত দিন প্রধান বিচারপতি সাধারণত জনস্বার্থ মামলা শুনে থাকতেন।
আরও পড়ুন:
জনস্বার্থ মামলা ছাড়াও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং অতিসক্রিয়তার অভিযোগে দায়ের হওয়া সব মামলাও ছেড়ে দিল প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। পুলিশ সংক্রান্ত ওই সব মামলাও অন্য বেঞ্চে পাঠালেন প্রধান বিচারপতি। এ বার থেকে ওই সব মামলা শুনবে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ, পুলিশ সংক্রান্ত মামলা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের পরিবর্তে চ্যালেঞ্জ করতে হবে বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে। ২০২৩ সালের পর থেকে পুলিশ সংক্রান্ত সব মামলা শুনবেন বিচারপতি চক্রবর্তী।
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হয়তো তিনি শুনতে পারছেন না, তাই অন্য বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। তবে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না।’’ রাজ্য সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি অর্ক নাগ বলেন, ‘‘জনস্বার্থ মামলার তো কোনও আইনি সংস্থান নেই, এটা একটা ‘ডেভেলপমেন্ট অফ কনস্টিটিউশনাল ল’। ১৯৭৯ সালে প্রথম বার বিচারপতি পিএন ভাগবতী সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলার শুনানি শুরু করেন। তার পর জনস্বার্থ রুল তৈরি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কলকাতা হাই কোর্টেও এই সংক্রান্ত রুল তৈরি হয়। পত্র দ্বারা আবেদন করলেও সেটা জনস্বার্থ মামলার অধীনে বিচার্য। পত্র দ্বারা আবেদন প্রধান বিচারপতিকেই করা হয়। এত দিন প্রধান বিচারপতিই জনস্বার্থ মামলা শুনে এসেছেন। তবে তিনি যদি মনে করেন অন্য কোনও বিচারপতি জনস্বার্থ মামলা শুনবেন, তাতে কোনও আইনি বাধা নেই।’’