অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) নিয়ে রাজ্য সরকার যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, তার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি পেল। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। আদালত জানিয়েছে, অগস্ট মাস পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ অগস্ট। সে দিন পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।
২০১০ সালের পরে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। বলা হয়েছিল, সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত ভাবে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করতে হবে। তার পর নতুন করে ওবিসি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। রাজ্য একটি সমীক্ষা করে ওবিসি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। মামলাকারীদের অভিযোগ, রাজ্য জেলাভিত্তিক কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সমীক্ষা সীমাবদ্ধ রেখেছে। পূর্বতন ওবিসি তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার সামান্য কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে মাত্র। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়েছে হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে। আদালত রাজ্যের বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। বলা হয়েছিল, ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির উপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। বৃহস্পতিবার সেই মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হল।
আরও পড়ুন:
২০১০ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তার মধ্যে অমুসলিম জনগোষ্ঠী ছিল ৫৪টি এবং মুসলিম ১২টি। আদালত জানায়, ২০১০ সালের পর থেকে যাদের ওবিসি-তে নথিভুক্ত করা হয়েছে, তাদের শংসাপত্র বাতিল হবে। ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত যে ৬৬টি জনগোষ্ঠী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অংশ ছিল তাদের শংসাপত্র গ্রাহ্য হবে চাকরির নিয়োগ কিংবা কলেজে ভর্তিতে। ২০২৪ সালের রায়েও তা স্পষ্ট করা হয়। রাজ্য জানিয়েছিল, এই সংক্রান্ত মামলার কারণে কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগপ্রক্রিয়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে আদালত জানিয়ে দেয়, তেমন কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, ২০১০ সালে পূর্বতন বাম সরকার ৪২টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করে। তাদের মধ্যে ছিল ৪১টি মুসলিম এবং একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। এর পর ২০১২ সালে তৃণমূল সরকার ৩৫টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করে। তাদের মধ্যে ৩৪টি মুসলিম এবং একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বাম এবং তৃণমূল সরকারের আমলে যে ৭৭টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি-র তালিকায় ঢোকানো হয়, শুধুমাত্র তাদের বাতিল করা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশের পর সমীক্ষা করে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে ওবিসি-র নতুন তালিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার। তারা জানায়, আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষা করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সেই তালিকার বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা হয়।