ছোটবেলায় মা তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিলেন। ফিরেও তাকাননি। এখন বৃদ্ধ বয়সে ছেলের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই মায়ের ভার এখন আর নিতে রাজি নন ছেলে। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি গত কয়েক দিন ধরেই চলছিল কলকাতা হাই কোর্টে। বুধবার মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিল আদালত। নদিয়ার কল্যাণীর মহকুমাশাসককে (এসডিও) প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হল। মা-ছেলের বিষয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এসডিও-কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মায়ের চিকিৎসার খরচ এবং খাওয়াদাওয়া, ভরণপোষণের জন্য ন্যূনতম খরচ ছেলেকে দিতে হবে, আগেই জানিয়েছিল আদালত। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়েছে। ছেলের কাছ থেকে ন্যূনতম খরচের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর ছেলে নাবিক। বর্তমানে রয়েছেন আটলান্টিক মহাসাগরের জাহাজে। তাঁর তরফে তাঁর স্ত্রী আদালতে হাজির হয়েছেন। মায়ের খরচ বহন করতে তিনি অস্বীকার করেন। বুধবার এই সংক্রান্ত শুনানিতে এসডিও-কে বিচারপতি সিংহের নির্দেশ, মায়ের ন্যূনতম খরচের জন্য মাসে কত টাকা করে ছেলে পাঠাবেন, তা আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ঠিক করতে হবে। ২০০৭ সালের প্রবীণ নাগরিকদের ভরণপোষণ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী এসডিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ছেলেকে ও মাকে জানিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন:
মামলাকারী বৃদ্ধা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর হুইলচেয়ারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যে অসরকারি সংস্থায় তিনি রয়েছেন, সেখানে হুইলচেয়ারের বন্দোবস্ত নেই। সেখান থেকে অন্যত্র তাঁকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ছেলের আইনজীবী বুধবার আদালতে জানান, ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া যেতে পারে। তাতে তাঁর মক্কেলের আপত্তি নেই। কিন্তু বৃদ্ধার আইনজীবী পাল্টা জানান, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার জন্য এই টাকা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও টাকা দাবি করব না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার জন্য যত টাকা দেওয়া উচিত বলে ওঁরা মনে করেন, তা-ই দিন।’’
আদালতে এ বিষয়ে একটি সমস্যার কথাও জানান এসডিও। তাঁর মতে, মাকে ভরণপোষণের জন্য ছেলে কত টাকা দেবেন, তা ছেলেই বলতে পারেন। পুত্রবধূ নন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কর্মসূত্রে বাইরে আছেন। বিচারপতি জানতে চান, ছেলে কবে ফিরবেন? তাঁর আইনজীবী জানান, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ছেলে ফিরবেন। এর পরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে এসডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন বৃদ্ধার পুত্র। সে ক্ষেত্রে সেখানে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে দেবেন এসডিও। ছেলের ইমেল আইডি এবং ফোন নম্বরও নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগ করা না গেলে নভেম্বরে ছেলে ফিরলে এসডিও তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন এবং সিদ্ধান্ত নেবেন।