E-Paper

সাজার ক্ষেত্রে হাই কোর্ট রক্তপিপাসারই বিরুদ্ধে

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি থানার একটি ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া আফতাব আলমের ফাঁসির সাজা মকুব করে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ২০ বছরের আগে তাকে জেল থেকে মুক্তিও দেওয়া যাবে না।

সব্যসাচী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৩০
কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

অপরাধীদের ফাঁসির সাজা দেওয়ার বিষয়ে নিম্ন আদালতের আরও ‘দূরদর্শী’ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি এক আসামির ফাঁসির সাজা মকুব করার ক্ষেত্রে হাই কোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকেরা যেন রক্তপিপাসু না হয়ে পড়েন। কারণ, খুনিকে ফাঁসি দিলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায় না।

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি থানার একটি ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া আফতাব আলমের ফাঁসির সাজা মকুব করে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ২০ বছরের আগে তাকে জেল থেকে মুক্তিও দেওয়া যাবে না। এই রায়ের ক্ষেত্রে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, “কোনও অপরাধীকে ফাঁসি দেওয়া হলে পরে যদি কোনও তথ্য বা প্রমাণ উঠে আসে, তা হলে পুনরায় তদন্তের সুযোগ থাকে না। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে তা আর বদল করা যায় না।”

২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ধূপগুড়ির একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে আফতাব ও তার সঙ্গীরা লুটপাটের পাশাপাশি বাড়ির কর্তাকে কুপিয়ে খুন করে। নিহত ব্যক্তি সম্পর্কে আফতাবের মামা। সেই ঘটনায় সবাইকে ধরলেও আফতাব ছাড়া বাকি অভিযুক্তেরা নাবালক ছিল। ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আফতাবকে জলপাইগুড়ি আদালত ফাঁসির সাজা দেয়। সেই সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করে আফতাব। তার আইনজীবী অর্জুন চৌধুরীর অভিযোগ, প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আফতাবকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দির ক্ষেত্রেও অনেক অসঙ্গতি আছে।

রাজ্যের আইনজীবী নিলয় চক্রবর্তী পাল্টা দাবি করেন, পরিকল্পনা করেই আফতাব দলবল নিয়ে এই কাজ করেছিল। নিহতের স্ত্রী, সন্তান এবং অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দি ও তথ্যপ্রমাণ থেকে আফতাবের জড়িত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আফতাবকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে কোনও সংশয়ের জায়গা নেই। তদন্তেও কোনও ত্রুটি নেই। তবে ফাঁসির সাজা যথোপযুক্ত কি না, সেই প্রশ্ন হাই কোর্টের সামনে ছিল।

উল্লেখ্য, ফাঁসির সাজার ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের বিচারক যুক্তি দিয়েছিলেন, মামা এবং তাঁর গোটা পরিবারকেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল আফতাব। নাবালক সন্তানদের সামনে বাবাকে কুপিয়ে খুন করাকে ‘ঘৃণ্য’, ‘নৃশংস’, ‘নারকীয়’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন বিচারক। তবে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ঘটনার তথ্য ছাড়াও নিজের আবেগ এবং পূর্বাশ্রিত ধারণা দিয়ে অপরাধের বিবেচনা করেছেন নিম্ন আদালতের বিচারক। ‘ঘৃণ্য’ এবং ‘নৃশংস’ হলেও আফতাবের অপরাধ ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়। ডাকাতি করতে গিয়ে বহু সময়েই খুনের ঘটনা ঘটে। তাই ফাঁসির সাজা এ ক্ষেত্রে দেওয়া যায় না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Calcutta High Court death sentence criminals Law and Order Justice

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy