Advertisement
E-Paper

হাইকোর্টের নির্দেশে কালীপুজো-দীপাবলিতে রাজ্যে নিষিদ্ধ হল বাজি

মণ্ডপ থেকে ৫ মিটার দূরে ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ড লাগাতে হবে। শুধু কালীপুজোতেই নয়, দেওয়ালি, ছট, জগদ্ধাত্রীপুজোতেও বাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ২০:০০
দীপাবলিতে রাজ্যে নিষিদ্ধ বাজি। ফাইল চিত্র।

দীপাবলিতে রাজ্যে নিষিদ্ধ বাজি। ফাইল চিত্র।

শেষমেশ হস্তক্ষেপ করতে হল কলকাতা হাইকোর্টকেই। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, শুধু কালীপুজো এবং দীপাবলি নয়, আগামী ছট পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো এবং গুরু নানকের জন্মতিথিতেও রাজ্যে সব ধরনের বাজি বিক্রি ও পোড়ানো বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। একমাত্র এ রাজ্যের উপর দিয়ে অন্যান্য বাজি নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে দেশের বাকি রাজ্যে বাজি বিক্রি ও পোড়ানো বন্ধ হবে কি না, তা নির্ভর করছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের প্রধান বেঞ্চের রায়ের উপরে। আগামী সোমবার দিল্লিতে সেই রায় ঘোষণা হতে পারে।

পরিবেশকর্মীরা বার বার বলেছেন, শব্দ বা ধোঁয়ার নয়, দীপাবলি হয়ে উঠুক আলোর উৎসব। এ দিন আদালতের রায়েও সে-কথাই বলা হয়েছে। নাগরিকদের কল্যাণের জন্য বাজির বদলে মোমবাতি বা তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসব পালন করতে বলেছেন বিচারপতিরা।

কালীপুজোয় ও দীপাবলিতে বাজির ধোঁয়া থেকে কোভিড রোগীদের আশঙ্কার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। ধোঁয়া থেকে কোভিডের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কাও করছেন বিজ্ঞানীরা। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বাজির উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়নি। তাই অজয়কুমার দে নামে এক ব্যক্তি বাজি বন্ধের আর্জি জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। দুর্গাপুজোর মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশের মামলাটিও করেছিলেন অজয়বাবু। বাজি বন্ধের পাশাপাশি এই মামলায় কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, ছট পুজোয় ভিড় নিয়ন্ত্রণের আর্জিও ছিল। দুর্গাপুজোর মতোই কালী, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক পুজোয় মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং মণ্ডপের সামনে ‘নো এন্ট্রি জ়োন’ করতে বলেছে আদালত।

আরও পড়ুন: সাড়ে সাত মাস পর বুধবার থেকে রাজ্যে চালু হচ্ছে সীমিত লোকাল ট্রেন

প্রশাসনের খবর, আদালতের রায়ে ‘চাপমুক্ত’ হয়েছেন সরকারের শীর্ষ স্তরের আধিকারিকেরা। কারণ, বাজির বিপদ তাঁরাও বুঝেছিলেন। ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছিল চিকিৎসক ও নাগরিক সংগঠনগুলি। কিন্তু সরকার নিষেধের পথে না-হেঁটে বাজি না-পোড়ানোর অনুরোধ করেছিল। তবে সরকার পক্ষ এ দিন আদালতে বাজির মামলাটি পরিবেশ আদালতের বিচারাধীন বলে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ না-করার আর্জি জানায়। কিন্তু তা মানতে চাননি বিচারপতিরা। ঘটনাচক্রে, এ দিন সন্ধ্যায় বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক ছিল। রায়ের পরে তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। সূত্রের দাবি, ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাতে বলেন। কিন্তু আধিকারিকেরা তাতে সম্মত হননি।

আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, “আদালতের রায় যাতে পুরোপুরি কার্যকর হয় তা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতেই হবে।” রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, “মহামান্য আদালতের নির্দেশ মানতে আমরা বাধ্য।” তবে গত বছর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও নির্দিষ্ট সময়সীমার বাইরে বাজি পুড়েছিল। এ বছরও বহু এলাকায় বাজি বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। তা কত দূর আটকানো যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশাসন বলছে, বাজি বন্ধ করতেই হবে পুলিশকে। একইসঙ্গে দুর্গাপুজোর উদাহরণ টেনে তাঁরা বলছেন, নাগরিকদের সচেতনতা ও সাহায্য হলে সবই যে সম্ভব তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। লালবাজারের তরফে রাত থেকেই থানাগুলিকে বাজি অভিযান করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কোন রাজ্য ট্রাম্পের, কোথায় জিতলেন বাইডেন, দেখে নিন এক নজরে

মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধের পাশাপাশি মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের বাধ্যতামূলক ব্যবহার করতে বলেছে আদালত। মণ্ডপে কমিটির কত জন থাকবে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট-সহ বিভিন্ন স্থায়ী কালীমন্দিরগুলিতে কোভিড সুরক্ষা বিধি মানতেই হবে। তবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও কোভিড বিধি পালন কী ভাবে হবে তা পুলিশের উপরেই ছেড়েছে হাইকোর্ট। বিসর্জনে আতিশয্য, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত দু বছর রবীন্দ্র সরোবরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই ছট পুজো হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বার পরিবেশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে রবীন্দ্র সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা কেএমডিএ। ছট পুজোর শোভাযাত্রা নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চেয়েছে আদালত। সেই মামলার শুনানি আগামী ১০ নভেম্বর হবে।

Kali Puja Kolkata High Court Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy