E-Paper

এফআইআর করতে নির্দেশ হাই কোর্টের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ‘গাড়ির ধাক্কায়’ পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়ের আহত হওয়ার অভিযোগের পরে ইন্দ্রানুজ-সহ একাধিক পড়ুয়া পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫৭
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় আহত পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে এফআইআর রুজু করে তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, এ দিনের মধ্যেই এফআইআর রুজু করতে হবে। এর পাশাপাশি আগামী সাত দিনের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যকে একটি সুসংহত রিপোর্টও দিতে হবে। ১২ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি। প্রসঙ্গত, ইন্দ্রানুজ আগেই ইমেল মারফত পুলিশকে তাঁর অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই ইমেলে তিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, তাঁর গাড়িচালক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র-সহ তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আর্জি জানিয়েছিলেন।

এ দিন এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশ, রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি ঘোষ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘গোয়েন্দারা ব্যর্থ হলে আগামী দিনে প্রতিবেশী দেশের মতো অবস্থা হবে। তা হতে দেওয়া যায় না। কী ভাবে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এত জমায়েত হল?’’ তাঁর প্রশ্ন, মন্ত্রীকে কি গোয়েন্দারা আগাম সতর্ক করেছিলেন? তিনি কি সতর্কতা উপেক্ষা করেছিলেন? বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিরাপত্তার ফাঁক ছিল। এই ঘটনা এড়ানো যেত। পুলিশের মধ্যে কাজে অনীহা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। স্পেশাল ব্রাঞ্চের কোনও ত্রুটি উঠে এলে কোর্ট কড়া পদক্ষেপ করবে বলেও কার্যত সতর্ক করেছেন বিচারপতি। মন্ত্রীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় পুলিশ এফআইআর রুজু করলেও পড়ুয়াদের পাল্টা বক্তব্য এবং অভিযোগে কেন মামলা রুজু হয়নি, সেই প্রশ্নও রাজ্যকে করেন তিনি।

তাঁর মন্তব্য, “রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের উচিত অভিভাবকের মতো আচরণ করা।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ‘গাড়ির ধাক্কায়’ পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়ের আহত হওয়ার অভিযোগের পরে ইন্দ্রানুজ-সহ একাধিক পড়ুয়া পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে এক ছাত্রী ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে গায়ে হাত তোলার অভিযোগও করেছেন। সেই অভিযোগের পরেও যাদবপুর থানার পুলিশ এফআইআর রুজু করেনি।

এ দিন পড়ুয়াদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, শামিম আহমেদ কোর্টে অভিযোগ করেন যে, ঘটনার দিন সোমনাথ রায় নামে এক এসআই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি এফআইআর করেন। তাতে বলা হয়েছে, বিকেল ৪টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে মন্ত্রীকে হেনস্থা, গাড়ি ভাঙচুর ইত্যাদি হয়েছে। মণিকান্ত পারিয়া নামে এক বহিরাগতের অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় এফআইআর হয়। তাতে বলা হয়েছে, বিকেল ৩টের সময় ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, সাজিয়ে এফআইআর করা হয়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগকে আমল না দিয়ে বরং ইচ্ছেমতো গ্রেফতার করা হচ্ছে।

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত কোর্টে জানান, তদন্ত চলছে। পড়ুয়াদের সম্মিলিত অভিযোগে কারও নাম বা ফোন নম্বর ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ ব্যাপারে ই-মেল করা হলেও সাড়া মেলেনি। আহত পড়ুয়া বয়ান দিলেও তাতে সই করতে চাননি। তাই পুলিশ পদক্ষেপ করতে পারেনি। যদিও বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেন যে, স্বাক্ষরিত অভিযোগের ভিত্তিতে কোন এফআইআর হয়েছে? কেন আহত পড়ুয়ার বয়ানের ভিত্তিতেই এফআইআর রুজু করা হয়নি? এর কোনও স্পষ্ট সদুত্তর রাজ্যের তরফে শোনা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিকদের বলেন, “মহামান্য আদালত যা বলেছে, তা নিয়ে কিছু বলব না।”

ব্রাত্যের গাড়ি আদৌ ইন্দ্রানুজকে ধাক্কা মারেনি বলে দাবি করে ইতিমধ্যে তৃণমূলের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠন এবং কয়েক জন তৃণমূল নেতাও সরব হয়েছেন। এই প্রসঙ্গেও ব্রাত্য বলেন, “ছেলেটির মা, বাবা ভদ্র মার্জিত মানুষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি করি বলে আমিও সৌজন্য করেছি। ওঁরা যা বলছেন, আমি ওঁদের কথাটাই চূড়ান্ত বলে ধরে নিচ্ছি।”

হাই কোর্ট যে গোয়েন্দা ব্যর্থতা কথা বলেছে, সে প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে সত্যিই কোনও খবর ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিজের আত্মরক্ষার বিষয়টি ভাবতে হবে, তা ভাবতে পারিনি। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, পুলিশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়াটা দরকার ছিল না।” তাঁর কথায়, “কেউ বলতে পারেন, আর একটু ধৈর্য ধরতে পারতাম। কিন্তু তা-ও মনে করি না। ঠিক সময়ে বেরিয়েছি। নইলে আরও বিপন্ন হতাম।” তিনি বলেন, “আমায় বলা হয়েছিল, আহত ছাত্রের নামে অভিযোগ দায়ের করতে। আমি তা করিনি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy