Advertisement
E-Paper

Saikat Moitra: সৈকতকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত হাই কোর্টে

সৈকতবাবুর অপসারণের সিদ্ধান্তে শিক্ষা শিবির যেমন বিস্মিত, তেমনই তাঁর জায়গায় যাঁকে আনা হয়েছে, তাঁর নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২২ ০৬:৩২
উপাচার্য সৈকত মৈত্র।

উপাচার্য সৈকত মৈত্র। ছবি ইউটিউব থেকে নেওয়া।

রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ম্যাকাউটের উপাচার্য সৈকত মৈত্রকে আচমকাই সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল উচ্চশিক্ষা দফতর। সৈকতবাবু আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরে সোমবার উপাচার্যকে অপসারণের সরকারি সিদ্ধান্তের উপরে সাত দিনের স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট।

সৈকতবাবুর অপসারণের সিদ্ধান্তে শিক্ষা শিবির যেমন বিস্মিত, তেমনই তাঁর জায়গায় যাঁকে আনা হয়েছে, তাঁর নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তারা। ম্যাকাউটের উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহাকে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, মলয়েন্দুবাবু ওই বোর্ডের পাশাপাশি ম্যাকাউটের উপাচার্যের দায়িত্বও সামলাবেন। পরে সার্চ কমিটি গড়ে নতুন উপাচার্য বাছাই করা হবে। কিন্তু শিক্ষা শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, মলয়েন্দবাবুর মতো বাণিজ্য বিষয়ের এক জন শিক্ষক কী ভাবে ম্যাকাউটের মতো প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারেন? জবাব মেলেনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ম্যাকাউট আইন ২০০০ বলবৎ হয়েছিল ২০০১ সালের ২০ জুলাই। এই আইনের ৩০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, এই আইন লাগু হওয়ার দু’বছর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্ট্যাটিউট (বিধি) অনুযায়ী ‘ডিফিক্যাল্টি রিমুভ্যাল ক্লজ়’ আর লাগানো যায় না। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সৈকত মৈত্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু আইন বিভাগের মতে, চলতি বছরের ২৬ জুলাইয়ের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট অনুযায়ী এই অর্ডারের আর কোনও মান্যতা থাকার কথা নয়। ফলে ২৬ জুলাইয়ের পরে উনি আর উপাচার্য থাকতে পারেন না।’’ মন্ত্রী জানান, সরকার আদালতে তার বক্তব্য পেশ করবে।

অন্য উপাচার্যদের তো একই ভাবে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে। তা হলে? মন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউটের ক্ষেত্রে আমাদের এটা চোখে পড়েনি। ম্যাকাউটে এর উল্লেখ আছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি সরেজমিনে দেখা হচ্ছে।’’

উচ্চশিক্ষা দফতর গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি সৈকতবাবুকে দ্বিতীয় দফায় উপাচার্য করার যে-নির্দেশ প্রকাশ করেছিল, তার পঞ্চম অনুচ্ছেদে ‘রিমুভিং অব প্রেজ়েন্ট ডিফিকাল্টি’ শব্দবন্ধ রয়েছে। সেই নির্দেশে জানানো হয়, দু’-দু’বার উপাচার্য নিয়োগের ফাইল পাঠিয়েও রাজ্যপালের সম্মতি মেলেনি। তার পরে ওই ৩০ নম্বর ধারায় চার বছরের জন্য সৈকতবাবুকে উপাচার্যের পদে নিয়োগ করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, উপাচার্য নিয়োগে গলদ আসলে কার এবং কোথায়?

সৈকতবাবু প্রথম দফায় ম্যাকাউটের উপাচার্য হন ২০১৭ সালে। তার আগে তিনি বেলেঘাটার গভর্নমেন্ট কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সেরামিক টেকনোলজির অধ্যক্ষ ছিলেন। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই শিক্ষক ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় ম্যাকাউটের উপাচার্য হন। মেয়াদ ছিল ২০২৫ পর্যন্ত।

এ দিন সকালে মলয়েন্দুবাবু ম্যাকাউটের উপাচার্যের দায়িত্বভার নেন। আর বিচারপতি কৌশিক চন্দ সৈকতবাবুকে অপসারণের সিদ্ধান্তের উপরে স্থগিতাদেশ দেন দুপুরে। তাঁর নির্দেশ, উপাচার্যকে অপসারণের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা দফতরের যে-সরকারি ‘নোট শিট’ রয়েছে, আজ, মঙ্গলবার তা কোর্টে পেশ করতে হবে। আজই বেলা ২টোয় শুনানি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ম্যাকাউটের উপাচার্যের পদে ইস্তফা দেওয়ার জন্য শুক্রবার ই-মেলে নির্দেশ দেওয়া হয় সৈকতবাবুকে। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেন সৈকতবাবু। তাঁর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সৌম্য মজুমদার ও উত্তমকুমার মণ্ডল উচ্চ আদালতে জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৈকতবাবুকে ম্যাকাউটের উপাচার্য-পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তাঁকে সরে যেতে বলা হয়। অপসারণের চিঠিতে ‘শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি’ ভিন্ন কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেখানো হয়নি। ২০২১ সালে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে-প্যানেল রাজভবনে গিয়েছিল, তাতে এক নম্বর প্রার্থী হিসেবে সৈকতবাবুর নাম ছিল। পরে কোর্টের বাইরে উত্তমবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে আচমকা এক জন উপাচার্যকে সরানো যায় না বলে বিচারপতি মন্তব্য করেছেন।’’ তাঁর মতে, অপসারণের চিঠির বয়ান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ম্যাকাউট সূত্রের খবর, হরিণঘাটা ক্যাম্পাসে এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। কর্তৃপক্ষ তাঁকে সল্টলেক ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। এই বিষয়টি সৈকতবাবুর অপসারণের অন্যতম কারণ কি না, প্রশ্ন উঠছে।

এই প্রশ্নটিও বড় হয়ে উঠছে যে, শিক্ষা দফতরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের পছন্দের তালিকায় না-থাকার জন্যই কি এই অপসারণ? অনেকে বলছেন, সৈকতবাবু যখন উপাচার্য হন, তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের অন্দরে পার্থের প্রভাব ‘মুছে ফেলার’ প্রক্রিয়া চলছে। এই অপসারণের সঙ্গে সেই প্রক্রিয়ার সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে বিভিন্ন স্তরে।

MAKAUT vice chancellor Calcutta High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy