কলকাতা ও আশপাশের জেলাগুলিতে অবৈধ বাজি তৈরি ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী পদক্ষেপ করেছে রাজ্য প্রশাসন, সেই রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের করা মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চের আরও নির্দেশ, কালী পুজো ও দীপাবলির আগের ও পরের বাতাসে দূষণের মাত্রা সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে। অবৈধ বাজি তৈরি ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সহযোগিতা করেছে কি না তাও উল্লেখ করতে হবে সেই রিপোর্টে। পুজোর ছুটির শেষে আদালত চালু হলে তার তিন সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছেডিভিশন বেঞ্চ।
এ দিন রাজ্যের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তাঁর মন্তব্য, “রাজ্যের নিষ্ক্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে রাজ্যের কোনও সদিচ্ছা নেই এই সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করার, বৈধ সবুজ বাজি ছাড়া অননুমোদিত বাজি তৈরি ও বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার। কী পদক্ষেপ করা হবে সেই বিষয়ে প্রশাসন নিজেই অন্ধকারে। সব সক্রিয়তা শুধু কাগজে কলমে। বাস্তবে এখনও কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। কোন বাজি অনুমোদিত এবং কোন বাজি অবৈধ সে বিষয়েও স্পষ্ট অবস্থান নেই রাজ্যের”।
মামলাকারী সংগঠন সবুজ মঞ্চের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী এবং সৈকত গুহঠাকুরতার অভিযোগ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে সারা রাজ্যেই বাজি বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ তা আটকাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের নির্দেশের উপর ভিত্তি করে শুধু সবুজ বাজিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি এ নিয়ে তৎপর না হওয়ায় রাজ্য জুড়ে অবৈধ কারখানা, গুদাম এবং দোকান থেকে বিপুল পরিমাণে বাজি তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের আর্জি, অবিলম্বে অননুমোদিত এবং অবৈধ বাজি তৈরি ও বিক্রি বন্ধ করার, বাজির দোকান ও গুদামে নিয়মিত তল্লাশি চালানোর এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব নির্ধারণ করার নির্দেশদিক আদালত।
রাজ্যের কৌঁসুলি অমিতাব্রত রায় জানান, এই বিষয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত রাজ্যের সব জেলায় পাঠিয়ে তা কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু পাল্টা বলেন, "নির্দেশিকা জারি করা হয়নি এখনও, আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এদিকে বাজি বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২১ সাল থেকে সবাই অপেক্ষা করছে। অবিলম্বে আদালতের নির্দেশপালন করুন।”
রাজ্যের আইনজীবী উত্তরে জানান, শুক্রবারের মধ্যে নির্দেশিকা জারি করা হবে। বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের পর্যবেক্ষণ, “সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ আরও দুই-তিন মাস আগে নেওয়া উচিতছিল রাজ্যের।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)