একশো দিনের কাজ নিয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলার শুনানি। —ফাইল চিত্র।
জবকার্ডধারীদের কেন বেকার ভাতা দেওয়া হবে না? সে বিষয়ে রাজ্যের থেকে ব্যাখ্যা জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। একশো দিনের কাজ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুত সমিতি। সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েকের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। মামলাকারী পক্ষের বক্তব্য, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের আইন অনুযায়ী জবকার্ডধারীদের কাজ দিতে না পারলে, তাঁদের বেকার ভাতা (আনএমপ্লয়মেন্ট অ্যালাওয়েন্স) দিতে হবে রাজ্যকে। সে ক্ষেত্রে কেন রাজ্যকে ওই ভাতা দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে রাজ্যের জবাব চাইল হাই কোর্ট। পুজোর ছুটির পর নভেম্বর মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সে দিনই নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে রাজ্যকে।
রাজ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা দেওয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট দিতে পারেনি রাজ্য। সেই কারণেই টাকা পাঠানো বন্ধ রয়েছে। অন্য দিকে রাজ্যের দাবি, কেন্দ্র ৩৯টি দল পাঠিয়েছিল দিল্লি থেকে। কিন্তু কী অনিমের অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে ওই দলগুলি কিছু জানায়নি রাজ্যকে। এমন অবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বের আবহে সাধারণ জবকার্ডধারীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর সমিতি। উল্লেখ্য, রাজ্যে বর্তমানে জবকার্ডধারীর সংখ্যা ১ কোটির কাছাকাছি।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। সে দিন জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী অভিযোগ তুলেছিলেন, প্রকল্পের টাকা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের দ্বন্দ্বের কারণে প্রায় দু’বছরের কাছাকাছি প্রকল্পের আওতায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এর পরেই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, বর্তমানে রাজ্যে একশো দিনের কাজ চলছে কি না— তা জানাতে হবে সরকারকে। সোমবারের শুনানিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ২০২২ সালের ৯ মার্চ কেন্দ্রের থেকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে টাকা পাঠাচ্ছে না কেন্দ্র। টাকা না পাঠানোর কারণে একশো দিনের কাজে কোনও কাজও হচ্ছে না বলে সোমবার হাই কোর্টে জানিয়েছে রাজ্য।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে একশো দিনের কাজে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। বিরোধী দলনেতার দাবি ছিল, ভুয়ো জব কার্ড, মৃত ব্যক্তির নামে জব কার্ড, অসত্য তথ্য দিয়ে জব কার্ড তৈরি করে কেন্দ্রের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। মামলায় তাঁর অভিযোগ, গ্রামে বসবাস করেন না এমন ব্যক্তিদের নামেও জব কার্ড তৈরি করে দুর্নীতি করা হয়েছে। এমনকি ভুয়ো জব কার্ডের টাকা তোলার জন্য প্রচুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অপব্যবহার করা হয়েছে।
এর পরে ২০২৩ সালে পৃথক একটি জনস্বার্থ মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর সমিতি। জবকার্ডধারীদের মজুরির টাকা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিল তারা। তাদের বক্তব্য ছিল, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে জবকার্ডধারীদের ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা আসেনি। মামলায় মূল আর্জি ছিল, সুদ সমেত অবিলম্বে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হোক। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে কেন্দ্র একশো দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছিল, এর পর থেকে রাজ্যকে নিজেদের কোষাগার থেকে এই প্রকল্পের খরচ বহন করতে হবে। তবে ২০২২ সালের ৯ মার্চের আগে কোনও বকেয়া থাকলে কেন্দ্র তা মিটিয়ে দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy