ডাইনি অপবাদে ঠাকুমার মুণ্ডচ্ছেদের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত নাতির মৃত্যুদণ্ডের সাজা মকুব করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ফাঁসির সাজা খারিজ করে আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে।
২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের এক গ্রামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ঠাকুমা তারুবালা বেরাকে তাঁর বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে গ্রামের কালীমন্দিরে নিয়ে যান নাতি রাধাকান্ত বেরা। সেখানে ঠাকুমাকে বিগ্রহের সামনে প্রণাম করতে বাধ্য করেন নাতি। ঠাকুমা তারুবালা মাথা নত করলে নাতি রাধাকান্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর গলায় কোপ দেয়। মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর ঠাকুমার কাটা মাথা ও অস্ত্র হাতে নাচতে নাচতে বাড়ি ফেরেন নাতি। পুলিশ তদন্তে উঠে আসে, রাধাকান্তের মনে বিশ্বাস জন্মেছিল, তাঁর ঠাকুমা আসলে ‘ডাইনি’! তাই কালীমন্দিরে নিয়ে গিয়ে ‘বলি দিয়েছিলেন’!
ঝাড়গ্রাম আদালত রাধাকান্তকে ‘দোষী’ ঘোষণা করে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। হাই কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, নিহতের কন্যা, স্বামী ও জামাই তিন জন প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। মেডিক্যাল রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে, মৃত্যুর কারণ মাথা কেটে নেওয়া এবং এটি জীবিত অবস্থায় ঘটেছে। কিন্তু দোষীর বয়স মাত্র ২৮ বছর। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধের আগেকার কোনও রেকর্ড নেই। তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। বাসের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রায়শই হিংস্র আচরণ করতেন। দুই বিচারপতির বেঞ্চ রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘কারাগারে দোষীর আচরণ ভাল ছিল এবং তাঁর পরিবারের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা দুর্বল। এই সব কারণে আদালত মনে করছে এই মামলাটি বিরল থেকে বিরলতম নয়। তাই মৃত্যুদণ্ডের সাজা বাতিল করা হল।’’