Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ওসির গড়িমসিতে ক্ষোভ

নিগ্রহ-মামলায় কোর্ট দুরমুশ করল ডিজিকে

কখনও কখনও অতিসক্রিয়তা এবং প্রায় সময়েই নিষ্ক্রিয়তা। দু’টির জন্যই পুলিশকে বারবার তিরস্কার করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তোলাবাজি এবং দুই মহিলার নিগ্রহের মামলায় মঙ্গলবার শুধু নিচু তলার পুলিশ বা সাধারণ পুলিশকর্তা নয়, রাজ্য পুলিশের ডিজি-কেও জোড়া ফলায় বিঁধলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

কখনও কখনও অতিসক্রিয়তা এবং প্রায় সময়েই নিষ্ক্রিয়তা। দু’টির জন্যই পুলিশকে বারবার তিরস্কার করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তোলাবাজি এবং দুই মহিলার নিগ্রহের মামলায় মঙ্গলবার শুধু নিচু তলার পুলিশ বা সাধারণ পুলিশকর্তা নয়, রাজ্য পুলিশের ডিজি-কেও জোড়া ফলায় বিঁধলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

নিয়ম মেনে কাজ না-হওয়ায় বিচারপতির প্রথম মন্তব্য, অধস্তন পুলিশকর্মীরা রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নির্দেশ না-মানলে সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক! আর দ্বিতীয় দফায় বিচারপতির তিরস্কার এসেছে প্রশ্নের আকারে। সরকারি আইনজীবীর কাছে তিনি জানতে চান, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এবং তদন্তকারী অফিসার কি খোদ ডিজি-রই প্রশ্রয় পাচ্ছেন? সেই প্রশ্রয়ের আড়াল আছে বলেই কি পুলিশ-প্রধানের নির্দেশ না-মানার সাহস দেখাতে পারছেন তাঁরা?

মধ্যমগ্রাম থানার ওই নারী-নিগ্রহের মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তদন্তকারী অফিসার নির্যাতিতাদের গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত না-করায় বিচারপতি এ দিন এ ভাবেই দুরমুশ করেন ডিজি এবং তাঁর বাহিনীকে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার নির্যাতিতা মা-মেয়ের অভিযোগের চেয়ে তাঁদের পড়শিদের বক্তব্য বিশ্বাস করায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, মধ্যমগ্রাম থানার ওসি বা তদন্তকারী অফিসার তাঁদের শীর্ষ কর্তা ডিজি-র প্রশ্রয় পাচ্ছেন কি না।

তদন্তকারী অফিসার এবং ওসি-র তদন্তে গাফিলতি খুঁজে পেয়ে বিচারপতি দত্ত এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, অবিলম্বে তা দেখতে হবে। আদালতে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। নির্যাতিতা এবং তাঁর মায়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্যও এসপি-কে নির্দেশ দেন বিচারপতি।

স্থানীয় একটি ক্লাবের কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছিলেন মধ্যমগ্রামের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা এক কলেজছাত্রী। তিনি স্থানীয় একটি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা বলে জানান ওই ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ, দাবি অনুযায়ী দু’লক্ষ টাকা এবং তাঁদের বসতজমির একাংশ না-পেয়ে শাসক দলের মদতে পুষ্ট ওই যুবকেরা তাঁকে এবং তাঁর মাকে ক্লাবে নিয়ে গিয়ে মারধর এবং শ্লীলতাহানি করে। থানায় জানানো সত্ত্বেও পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেনি। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মামলা করেন ওই ছাত্রী। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি দত্ত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন, পুলিশ কী তদন্ত করেছে, তার যাবতীয় নথি মঙ্গলবার আদালতে পেশ করতে হবে মধ্যমগ্রাম থানাকে।

ওই কলেজছাত্রীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহরায় জানান, তাঁর মক্কেলদের বাড়ি মেরামতির কাজ চলছে জেনে স্থানীয় ক্লাবের কিছু সদস্য দু’লক্ষ টাকা তোলা চায়। তিন হাজার টাকা দেওয়া সত্ত্বেও আরও টাকা চেয়ে ওই যুবকেরা চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। টাকা না-পেয়ে দুই মহিলাকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করে তারা। দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশ ওই যুবকদের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ দেয়নি। শুধু শ্লীলতাহানির অভিযোগ নথিভুক্ত করেই দায় সেরেছে।

সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্ত এ দিন আদালতে জানান, তদন্তকারী অফিসার নিগৃহীতা ছাত্রী এবং তাঁর মায়ের গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করেননি। তবে দুই অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে এবং ১১ জন অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছে। সরকারি আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি দত্ত জানান, হাইকোর্ট তো আগেই ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে নিগৃহীতার গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। ডিজি-ও সব থানায় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ওসি এবং তদন্তকারী অফিসার সেই নির্দেশ মানেননি কেন? খোদ ডিজি-র নির্দেশ কী ভাবে অমান্য করে নিচু তলার পুলিশ?

এই প্রসঙ্গে নিজের আদালতের কথা তোলেন বিচারপতি দত্ত। জানান, তিনি কোনও নির্দেশ দিচ্ছেন, অথচ আদালতের কর্মী-অফিসারেরা তা মানছেন না, এটা হতে পারে না। কিন্তু ডিজি-র নির্দেশ তাঁর অফিসার-কর্মীরা মানছেন না, এর থেকে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE