Advertisement
E-Paper

‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টো কথা বলছেন স্বাস্থ্যসচিব’! স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জল প্রকল্পের মামলায় বলল হাই কোর্ট

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ নম্বর ব্লকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে জল প্রকল্প নির্মাণের সরকারি উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫১

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে জল প্রকল্প নির্মাণের মামলায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলল হাই কোর্ট। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিপর্বে এ বিষয়ে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ— ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের জন্য ঘোষণা করছেন। আর স্বাস্থ্যসচিব হলফনামা দিয়ে উল্টো কথা বলছেন। তাঁর হলফনামা নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ নম্বর ব্লকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মামলায় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার বলেছে, ‘‘গতকাল মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের জন্য অনেক কিছু ঘোষণা করেছেন। বেতন বৃদ্ধি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাসপেনশন তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই মামলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোর বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিবের অবস্থানের সমালোচনা করেছিলাম। তাঁর হলফনামা নিয়ে আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’’

এই মামলায় মঙ্গলবার আদালত আবার স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের সচিবের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মান উন্নয়নে কী পরিকল্পনা রয়েছে তা জানাতে হবে। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন স্বাস্থ্যসচিব রিপোর্ট দিয়ে পরিকল্পনার কথা জানাবেন। হাই কোর্ট জানিয়েছে, জনস্বার্থে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে জল প্রকল্পের কাজ করা যাবে। মামলার শুনানি পর্বে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘১৯৭৫ সালে হাসপাতালের ১০টি শয্যা ছিল। ২০২৫ সালেও তাই রয়েছে। ওই ঘটনায় আমরা অসন্তুষ্ট নই। আমরা দুঃখিত। জল প্রকল্পের বিরোধিতা করছি না। সেটাও করা জরুরি। কিন্তু প্রয়োজনে মানুষকে যাতে ৪০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে যেতে না হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতে পরিষেবা মেলে সেটা বলেছি।’’

প্রসঙ্গত, মথুরাপুর-২ নম্বর ব্লকের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য জমি দিয়েছিলেন আবেদনকারী জাকির হোসেন মোল্লার পিতামহ। অভিযোগ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফাঁকা অংশে একটি পাম্প তৈরির কাজ চলছে। তাতে অনুমোদন দিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন জাকির। তাঁর বক্তব্য, ১৯৬২ সালে তাঁর পিতামহ পুরন্দরপুর এলাকায় ছয় শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য ছ’বিঘা জমি দান করেন। পরে ১৯৭৬ সালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতির জন্য আরও কয়েক বিঘা জমি দান করেন তাঁর পিতা। তখন শয্যাসংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে হয় ১০। এত দিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভালই চলছিল। কোভিডের পর থেকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে নজর দেয়নি প্রশাসন। সেখানে দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। উন্নতির পরিবর্তে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে এখন নির্মাণ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানান, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থার উন্নতি করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট দেখে হাই কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সে দিন প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘‘৫০ বছরের পুরনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০টি শয্যা রয়েছে। ১৯৭৬ সালেও যা ছিল ২০২৫ সালে এসেও তা-ই। এত বছরে একটিও শয্যা বৃদ্ধি করা হয়নি। স্বাস্থ্যসচিব বলছেন, সেখানে যথেষ্ট শয্যা রয়েছে। এটি তাঁর অবস্থান। কিছু তো যুক্তিপূর্ণ কথা বলুন। এ বার ভাবুন, হাই কোর্টে ৩৪ জন বিচারপতি ছিলেন। এ বার কেউ যদি বলেন আর বিচারপতি দরকার নেই। সপ্তাহে ১০০টি মামলা দায়ের হয় আমরা সামলে নেব। এটা কি সম্ভব? আমরা চাইছি, বিচারপতি সংখ্যা ১০০-র বেশি করতে। ২০০ একর জমি পেলে সেখানে জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি হবে। আর ৪০ শতাংশ বিচারপতির আসন শূন্য পড়ে রয়েছে। আপনাদের অবস্থানে আমি খুবই হতাশ।’’ তবে মথুরাপুরের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে কোনও নির্দেশ দেবেন না বলেও সে দিন জানিয়েছিলেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, ‘‘আধিকারিকেরা জানেন, কী ভাবে কাজ করতে হয়। কোনও নির্দেশ দেব না। কমপক্ষে ৫০ শয্যার হাসপাতাল করুন যেখানে চুক্তিভিত্তিক কর্মী থাকবেন না। কর্মীরা ভদ্রস্থ বেতন পাবেন।’’

Calcutta High Court Primary Health Centre water project Unauthorized Water Project mathurapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy